আমি মিতা। আমার বাবার চাকুরীর জন্য ছোটবেলা থেকেই এক জায়গাই বেশিদিন থাকা হয়ে ওঠেনি কখন। আমি যখন ক্লাস নাইনে তখন আমরা আমাদের দাদির বাড়িতে চলে আসি স্থায়ী ভাবে থাকার জন্য। আমাকে একটা ভাল স্কুলে ভর্তি করান হয়। নতুন স্কুল, নতুন পরিবেশ। নিজেকে এই নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে
নিতে একটু সময় লাগছিল। কিছু দিনের মধ্যেই আমার নতুন ক’জন বান্ধবী হল, সব কিছু ভাল ভাবেই চলতে থাকল।
নিতে একটু সময় লাগছিল। কিছু দিনের মধ্যেই আমার নতুন ক’জন বান্ধবী হল, সব কিছু ভাল ভাবেই চলতে থাকল।
আমি আমার বান্ধবীদের সাথে নিয়মিত স্কুলে একসাথে যাতায়াত করতাম। হঠাৎ একদিন খেয়াল করলাম একটা ছেলে, আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভাবলাম হয়তো এমনি
তাকিয়ে আছে, বিষয়টা মাথায় নিলাম না।
তাকিয়ে আছে, বিষয়টা মাথায় নিলাম না।
আমি স্কুল ফেরার সময় দেখলাম ছেলেটি আবারও আমাকে দেখছে। আমি এবার ভয় পেয়ে দৌড় দিলাম। এভাবে বেশ কিছুদিন গেল। একদিন আমার এক বান্ধবী আমাকে এসে বলল, ওই ছেলেটা আমার সাথে কথা বলতে চায়। আমি আমার বান্ধবীকে বললাম যে, আমি ওর সাথে কোন কথা বলতে চাইনা। স্কুল ছুটির পর যখন যাচ্ছিলাম ছেলেটা আমার রাস্তা আটকায়। আমি ভয় পেয়ে যাই, ছেলেটি জানাই সে আমাকে ভালবাসে। আমি এতটাই ভয় পেয়েছিলাম যে কেঁদেই দিলেছিলাম। এরপর সে আমার রাস্তা ছেড়ে দেয় আমি চলে আসি ওখান থেকে।
এরপর সে বিভিন্ন ভাবে আমাকে তার ভালবাসার কথা জানায়। শেষ পর্যন্ত আমি তাকে আমার বাবা-মাকে জানাতে বলি,
সে আমার কথা মতো আমার বাবা-মাকে জানায়। এমন কি সবাই রাজিও হয়ে যায়, সে আমার সাথে কথা বলতে, ঘুরতে চাইত সব সময়। আমি তা পারতাম না, কারন আমার ক্লাস থাকত।
হঠাৎ একদিন সে রেগে গিয়ে বিয়ে করতে চায়, বাবা-মা তাকে অনেক বুঝায় যে সামনে আমার পরীক্ষা। পরীক্ষাটা শেষ হলেই বিয়েটা হক। না সে কোন ভাবেই মানল না সেই রাতেই সে আমাকে বিয়ে করল। বিয়ের পর আমাকে বাহিরে যেতে দিতনা অনেক কষ্ট করে এসএসসি পরীক্ষাটা দিলাম।
সে আমাকে সব কিছুতেই বাঁধা দিতো। আমাকে সবসময় সন্দেহ করত। আমি ভাবতাম অতিরিক্ত ভালবাসার কারনেই হয়ত এমন করে। কিন্তু দিন দিন তার অত্যাচার বারতেই থাকে আমার কোন বান্ধবীর সাথে কথা বলতে দেয়না, আমাকে মায়ের কাছে যেতেও দেয়না। এসব নিবরে মেনে নিছিলাম।
একদিন রাতে খেয়াল করলাম সে ফোনে এক মেয়ের সাথে কথা বলছে। বিষয়টি জানতে চাইলে সে এড়িয়ে যায় আমিও তেমন কিছু বলিনা। কারণ আমি ভাবিনি যে, সে আমাকে ছাড়া অন্য কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক তৈরী করবে। এরপর প্রায় মেয়েটি ওকে ফোন দেয়া শুরু করল। খুব কষ্ট পেয়ে একদিন জানতে চেয়েছিলাম, মেয়েটা কে? ও আমার ওপর রেগে গিয়ে আমাকে খুব মারধোর করে আর বাজে ভাষাই গালি দিতে থাকে।
সে ওই মেয়েটি সাথে প্রেম করত আমাকে পাশে রেখে কথা বলত। অনেক কষ্ট হতো। কিন্তু কাউকে বলতে পারতাম না। কারণ কারো সাথে আমাকে যোগাযোগ করার কোন সুযোগ সে দিত না। আমার শ্বশুড়-শ্বাশুড়িও তাদের ছেলের পক্ষ নিয়েই কথা বলতো। বলতো, আমিই নাকি খারাপ, তাদের ছেলে কোন খারাপ কাজ করতে পারেনা।
এক সময় সুযোগ পেয়ে বড়দের জানালে তারা বললেন বাচ্চা-কাচ্চা হলেই ঠিক হয়ে যাবে। এর এক বছর পর আমার মেয়ে জন্ম নিল। ভাবলাম এবার হয়ত ও ভাল হবে। কিন্তু না সে আগের মতই থাকল। এখন তো আরো বাজে অবস্থা হল। প্রতিদিন সে মদ খেয়ে বাসায় আসতো, আমাকে মারধোর করতো, গালিগালাজ করতো। এমকি সে এটাও বলতো আমি তার অস্ত্র। অন্য মেয়েদের সাথে এঞ্জয় করার পর যখন তারা ওকে বিয়ে করতে চাইবে তখন সে আমাকে আর আমার বাচ্চা দেখায়। তখন আর ঐসব মেয়েরা বিয়ে করতে চাই না।
একদিন তো আমাকে এতো মেরে ছিল যে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে আমার জ্ঞান ফিরে। আর মেনে নিতে পারছিলাম না। শেষ বাবা-মার সাথে চলে আসে। পরে আইনের আশ্রয় নেয়। এখন আমি ওর থেকে আলাদা, কিন্তু ও আমাকে মেরে ফেলার আমার মেয়েকে নিয়ে নিবে এমন হুমকি দিয়েই যাচ্ছে আরও কত কি। আমি জানি ও আমার ক্ষতি করতে চেষ্টা করবে, কিন্তু আমি ওর সাথে থাকলে মারা যেতাম।
এখন অনেকেই আমাকে অনেকেই খারাপ বলে। কিন্তু কেউ যদি জানতো আমার সাথে গত কয়েক বছরে কি অত্যাচার হয়েছে বলতে পারতাম তবে বুঝতো। কিন্তু এখন মাঝে মাঝে মনে হয়, আমাদের সমাজ কেন মেয়েদের সবসময় দোষ দেয়? সব সময় কি দোষ আমাদের মেয়েদেরই?
আজ ব্রেক দ্যা সাইল্যান্সে আমার ঘটনা শেয়ার করলাম যেন, আমার মতো নিরবে কষ্ট সহ্য না করে প্রতিবাদ করুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন