Breaking

মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৫

কি ডেনজারাস মেয়েরে বাবা, রাস্তায় ও মানুষকে চড় কষে দিতে পারে

আমি সম্পা। আমি ছোটো বেলা থেকেই একটু সহজ সরল ছিলাম। তেমন কারো সাথে মিশতে পারতাম না সহজে। স্কুলে যাওয়া-আসা আর বাড়িতে থাকার সময়ে আমার একমাত্র সঙ্গি ছিল আমার এক ক্লাস বড় মিনা আপু। আপুও তেমন খেলাধুলা করত না বলে আমার খেলাধুলা করার ঝোকটাও একটু কম ছিল।

আমার বয়স তখন বার-তের হবে। ক্লাস সিক্স এ পড়ি। সবে বাড়ন্ত
বয়স। আপু বলল “অনেক দিন লুকোচুরি খেলি না। নাও আজ সবার সাথে লুকোচুরি খেলি।” বাসার আশেপাশের সমবয়সি ৮-৯ জন মিলে আমরা খেলছিলাম। খেলার এক পর্যায়ে আমাদের এক পাড়াতো চাচা এসে আমাদের কয়েকজনকে বলল “আমি তোমাদের লুকিয়ে দেয়, দেখবে জীবনেও ওরা খুঁজে পাবেনা”। এই বলে একটা আধা কন্সট্রাক্টেড বাসার ভিতরে আমাদের মধ্যে ৪জনকে লুকিয়ে দিলেন। আমাকে লুকিয়ে দিলেন এক সিমেন্টের বস্তার আড়ালে, একেবারে বস্তা দিয়ে ঢেকে। একে একে একসময় ওদের সবাইকে বের করে দিয়ে অন্য জায়গায় লুকিয়ে দিলেন।আর আমাকে ওখান থেকে উঠতে বাড়ন করলেন। আমিও সরল বিশ্বাসে সেখান থেকে উঠিনি।

কিছুক্ষণ পর এসে অন্ধকার ঘরে বস্তাগুলোর আড়ালে আমাকে হাতরাতে হাতরাতে বললেন “ঠিক আছতো! থাকো এখানে, দেখবে তোমাকে কেউ খুঁজে পাবেনা।” আমি তখন বললাম “আমি ঠিক আছি”। তখন সে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর সে এসে বলছে “আওয়াজ করোনা কিন্তু, তাহলেই ওরা খুঁজে পাবে না”। আমি এইবারে বুঝলাম সে আমার বুকে হাত দিচ্ছে। তখন আমি বললাম “আমি বের হব, থাকব না এখানে, অন্যখানে লুকব।” তাই বলে ছুটে বের হলাম। বের হয়ে ইচ্ছে করেই ধরা দিয়ে দিলাম। 

আমাকে দেখে মিনা আপু বলল “কি হয়েছে তোমার? তুমি তো হাপাচ্ছ। আর এতো ঘামছ কেন?” আমি কি বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না। হাপ ছেড়ে বললাম “ছুটে এসেছি তো, তাই বোধই”। তারপর থেকে আমি ওই লোকটার সামনে ভয়ে কখন যেতাম না।

সেই সম্পর্কেই আমার মাকে বলতে শুনেছি “ছেলেটা বড় ভালো, কারো দিকে মুখ তুলেও চায় না।” কিন্তু আমি আমার মাকে বলতে পারিনি যে ঐ লোকটা আমার সাথে কি করেছিল। 

প্রায় ১বছর পর আমার ছোটো চাচুর বিয়ের অনুষ্ঠান। চারিদিকে সাজসাজ রব। বউ আসবে বউ আসবে। অনেক লোকের ভীড়ে দাঁড়িয়ে আমি নতুন চাচির জন্য অপেক্ষা করছি।হঠাৎ একটা হাত আমার বুক স্পশ করছে বুঝতে পেরে এক ঝটকাই সরিয়ে দেখি সেই সাধু রূপি শয়তানটা। কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়েই আবারো ছুটে পালালাম। আমার আনন্দের সবকিছু মাটি। চাচুর বিয়ের মজাটা আর নেয়া হয়নি। বরং মনের মধ্যে ভয়, রাগ আর ঘৃণা বাসা বাঁধতে শুরু করল।

পথে-ঘাটে কত না বাজে কথা শুনতে হয়েছে আমাকে। আমি শুধুই মেয়ে বলে-কত বাজে পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয়েছে। এসব সইতে সইতে আমার সহ্যের আর সীমা নাই। তাই এখন প্রতিবাদ করতে ইচ্ছা করে। করেও ফেলি কখন কখন।

গত বছর আমি স্টাডি টুর এ গিয়ে ছিলাম কক্সবাজারে। একটা মাকেটের ভিতরে প্রচন্ড ভীড়। আমি আমার কিছু বন্ধু বান্ধবের সাথেই ছিলাম। হঠাৎ এক পশুহাত আমাকে বুকে বাজে ভাবে স্পর্শ করছে, বুঝতে পেরে। আমি কোন কিছু না ভেবে কষে একটা থাপ্পর বসিয়ে ছিলাম পশুটাকে। আমার বন্ধুরা সহ আশেপাশের সবাই তো অবাক। অবশ্য সেদিন আমাকে সবাই সাপোর্ট করেছিল।

কিন্তু পরে আমার তথাকথিত বন্ধু মহলেই আমার আড়ালে বলতে শুনেছি “কি ডেনজারাস মেয়েরে বাবা, রাস্তায় ও মানুষকে চড় কষে দিতে পারে।” ধিৎকার আমাদের এই অদ্ভুত সমাজকে। যারা সইতে পারে তারা লক্ষ্মী মেয়ে আর প্রতিবাদ করে তারা ডেংজারাস।  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন