ব্রিটিশ রাজপরিবারের বধূদের মধ্যে ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন কেবল একজন। প্রিন্সেস ডায়না ও চার্লসের প্রেম ছিল সেরা রোমাঞ্চকর কাহিনী। ডায়নার পুরো নাম ছিল ডায়না স্পেন্সার। তাকে দেখেই তার রূপে মুগ্ধ হয়েছিলেন তৃতীয় চার্লস। চার্লসের দৃষ্টিতে ডায়না পৃথিবীর সেরা সুন্দরী। আর ডায়নার দৃষ্টিতেও প্রিন্স চার্লসই সবচেয়ে আরাধ্য পুরুষ। দুজন দুজনের প্রেমে মজে গেল। সারা বিশ্বে ঝড় উঠল।
রানী এলিজাবেথ প্রথমে এ বিয়েতে অমত করলেও পরে রাজি হয়ে যান। ১৯৮১ সালের ২৯ জুলাই ধুমধামের সঙ্গে তাদের বিয়ে হয়ে গেল। বিশ্বের প্রায় ৫০০ কোটি মানুষ টেলিভিশনের পর্দায় উপভোগ করল সত্যিকারের এক রাজকীয় বিয়ে। সেই সময় প্রিন্স চার্লসের বয়স ছিল ৩২ আর প্রিন্সেস ডায়নার বয়স ২০। চরম উৎসাহ-উদ্দীপনা আর আনন্দের জোয়ারে শুরু হলো প্রিন্স চার্লস আর প্রিন্সেস ডায়নার নতুন জীবন। রাজকীয় জাহাজ ব্রিটানিয়াতে চড়ে হানিমুন করলেন তারা। সব ঠিকঠাক মতোই চলছিল।
কিন্তু আস্তে আস্তে ফিকে হতে লাগল সম্পর্ক। এর মধ্যে বিয়ের এক বছরের মাথায় ডায়না অনুভব করলেন চার্লস তাকে আগের মতো আর ভালোবাসে না। একান্তে সময় দিতে চায় না। একটু যেন বেশিই ব্যস্ততা দেখাচ্ছে। চাইলেই এড়িয়ে যায়। বিষয়টি এক দিন-দুই দিন করে বেশ ক'দিন ধরে খেয়াল করলেন ডায়না। এরপর প্রিন্সকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন এই অবহেলার কী মানে। প্রিন্স তখন এড়িয়ে গেলেন। ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ রাজা হিসেবে তার ব্যস্ততার কথা বলে স্ত্রীর ভালোবাসাকে চেপে রাখলেন। আর এসব নিয়ে দুজনের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। দুজনেই দুজনকে সন্দেহ করতে থাকলেন। প্রিন্স চার্লসও ডায়নাকে নিয়ে নানা ঘটনা-রটনার খবর জানলেন। প্রায়ই এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হতো। আস্তে আস্তে তাদের মধ্যকার দূরত্ব আরও বেড়ে গেল।
সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিয়ের সাত বছর পর ঘটল মারাক্তক ঘটনাটি। ১৯৮৯ সালের প্রথম দিকে প্রিন্স চার্লসের হাতে এলো একটি টেপ রেকর্ড ক্যাসেট। তাতে দুটি কণ্ঠের সংলাপ। একটি নারীকণ্ঠ, অন্যটি পুরুষ। নারীকণ্ঠটি প্রিন্সেস ডায়নার। পুরুষকণ্ঠটি জেমস গিলাবের। চার্লস অনুসন্ধান করে জানলেন গিলাব ছিলেন ডায়নার বিয়ে-পূর্ব জীবনের বয়ফ্রেন্ড। আর এই কথোপকথনটি ওই সময়ের। সাইরিল রিনান নামে এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা এবং জেন নরগোভ নামে আরেকজন মিলে গোপনে আড়ি পেতে ডায়না ও জেমস গিলাবের কণ্ঠ ধারণ করেন। এরপর সেটি এক সময় প্রিন্স চার্লসের হাতে আসে।
অল্প সময়ের মধ্যেই ক্যাসেটের বিষয়টি সবার নজরে চলে আসে। প্রকাশিত হয়ে পড়ে এই আলোচিত অডিও টেপটি। ক্যাসেট প্রকাশের পর সারা বিশ্বে আলোড়ন ওঠে। এর ছোঁয়া লেগেছিল রাজপ্রাসাদেও। সংসারে ভাঙনের সুর উঠল। ১৯৯২ সালের ৯ ডিসেম্বর ডায়না ও চার্লস আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা থাকার ঘোষণা দেন। এরপর অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে মিসরীয় ধনকুবের ডোডি আল ফাহাদের সঙ্গে জড়ান ডায়না। কিন্তু খুব বেশি দিন দুনিয়ার বুকে টিকতে পারেননি সুন্দরী ডায়না। ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট ব্রিটেনের রাজপরিবারের অন্যতম সদস্য প্রিন্সেস ডায়না এবং তার বন্ধু মধ্যপ্রাচ্যের ধনকুবের ডোডি আল ফাহাদ প্যারিসে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন