Breaking

শনিবার, ৬ জুন, ২০১৫

পুঠিয়ার রাজাদের ইতিহাস

রাজশাহীর পুঠিয়ার রাজবাড়ী সম্পর্কে জানতে হলে আগে রাজাদের ইতিহাস জানা দরকার। মূলত রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবংশের উৎপত্তি হয় মোগল সম্রাট আকবরের আমলে। সেই সময় রাজশাহী এলাকায় অনেকাংশ ছিল আলাইপুর এলাকার পাঠান জায়গীরদার লস্কর খাঁয়ের। তারই নাম অনুসারে পুঠিয়া পয়গণা এক সময় লস্করপুর নামে পরিচিতি লাভ করে। তার মৃত্যুর পরে ওই এলাকার আবার সম্রাট আকবরের অর্ন্তগত হয়।
সম্রাট আকবরের সময়ে বঙ্গদেশ সুবেদার দ্বারা শাসিত হতো। সুবেদাররা নিজ এলাকার রাজস্ব আদায় করে সম্রাটের কাছে পাঠাতেন। এভাবে কিছুদিন চলার পরে সুবেদাররা সম্রাটের কাছে রাজস্ব না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সময় মোগল সম্রাট আকবর সুবেদারদের শায়েস্তা করতে সেনাপতি মানসিংহকে প্রেরণ করেন।

পথে সেনাপতি বৎসাচার্য নামে এক তান্ত্রিক সাধকের সঙ্গে গোপনে সাক্ষাত করেন। ওই বৎসাচার্য সেনাপতি মানসিংহকে সুবেদার বিদ্রোহ দমনে দিক নির্দেশনা দেন। ওই দিক নির্দেশনা অনুযায়ী মানসিংহ খুব সহজের সুবেদার বিদ্রোহ দমনে সফলতা অর্জন করেন। মানসিংহ সুবেদার বিদ্রোহ দমন শেষে বৎসাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন ও লঙ্করপুর পরগনার দায়িত্ব নেয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু বৎসাচার্য সেই দায়িত্ব নিয়ে অস্বীকার করেন।
এ অবস্থায় তার সুচতুর সন্তান পীতাম্বর মায়ের পরামর্শে দায়িত্ব গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে সেই সময় পীতাম্বরের বয়স অল্প থাকায় এতোবড় পরগনার দায়িত্ব সামাল দেয়া সম্ভব ছিল না। তাই সেনাপতি মানসিংহ পীতাম্বরকে দিল্লি নিয়ে যান ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে লস্করপুর পরগনার দায়িত্ব দেন। মানসিংহের সহযোগিতায় ওই পীতাম্বরই পুঠিয়া রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা।
পীতাম্বর তার পৈত্রিক বাসভূমি চন্দ্রকলা ত্যাগ করে পুঠিয়ায় রাজধানী স্থাপন করেন। সম্রাট আকবরের মৃত্যুর কিছু পরেই পীতম্বর নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান। তার মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই নীলাম্বর উত্তরাধীকার সুত্রে জমিদারি দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে ‘রাজা’ উপাধী লাভ করেন। নীলম্বরই ছিলেন পুঠিয়া রাজবংশের প্রথম রাজা। পুস্করাক্ষ ও আনান্দরায় নামে নীলাম্বরের দুই ছেলে ছিল। পুস্করাক্ষ পাশের তাহিরপুরের ছোট রাজার বিশেষ বিরাগভাজন ছিলেন। সে জন্য তিনি পুস্করাক্ষকে তার অধেক সম্পত্তি দিয়ে যান। তবে পুস্করাক্ষ নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেলে তা আনান্দরায়ের নিজের অংশ মিলিয়ে লস্করপুরের আয়তন অনেক বেড়ে যায়। ৎধলনধৎর-৩
রাজা আনান্দ রায়ের একমাত্র ছেলে ছিলেন রতিকান্ত। রতিকান্তের ছিল তিন ছেলে। রামচন্দ্র, রঘুবীর ও যদুবীর। এদের মধ্যে রঘুবীর ও যদুবীর নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান। এদিকে, রতিকান্তের কিছু বিতর্কিত কার্মকাণ্ডের কারণে রতিকান্ত রাজা উপাধি হারান ও ‘রতিকান্ত ঠাকুর’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। এরপর আর কেউ আর রাজা উপাধি লাভ করেননি।
রতিকান্তের মৃত্যুর পরে রামচন্দ্র ঠাকুর মালিক হন। রামচন্দ্র তার শাসন আমলে দানশীলতা ও জনহিতকর কাজের জন্য অনেক সুনাম অর্জন করেন। রামচন্দ্রের চার ছেলে। এর হলেন- রূপ নারায়ণ, নর নারায়ণ, দর্প নারায়ণ ও জয় নারায়ণ। এদের মধ্যে রূপ নারায়ণ নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেছে দ্বিতীয় ছেলে নর নারায়ণ রাজত্ব লাভ করে। এরপরে রাজত্ব লাভ করেন তার একমাত্র ছেলে প্রেম নারায়ণ।
তার মৃত্যুর পরে একমাত্র ছেলে অনুপ নারায়ণ রাজ্য লাভ করেন। ব্রিটিশের তথ্য অনুযায়ী তার আমলেই লঙ্করপুর জমিদার প্রথম বন্দবস্ত হয়। অনুপ নারায়ণের চার ছেলে। এরা হলেন-নরেন্দ্র নারায়ণ, রুপেন্দ্র নারায়ণ, মদন নারায়ণ ও প্রাণ নারায়ণ। অনুপ নারায়ণের মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে নরেন্দ্র নারায়ণ গোপনে সব সম্পত্তি নিজের নামে করার চেষ্টা করেন। তা জানতে পেরে ছোট তিন ভাই বাধা দেন ও সম্পত্তি চার ভাগে ভাগ হয়। পরে নরেন্দ্র নারায়ণ বড় দাবি জানালে ছোট তিন ভাই অর্ধেক করে সম্পত্তি ছেড়ে দেন। এই ভাগ হয় ১৭৪৪ সালে।
নরেন্দ্র নারায়ণের বড় ছেলে ভূবনেন্দ্র নারায়ণ। অপরদিকে, প্রাণ নারায়ণের ছেলে ছিল আনন্দ নায়ায়ণ। লর্ড কর্নওয়ালিশের সময় ভূবনেন্দ্র নারায়ণ ও আনন্দ নারায়ণের সঙ্গে বার্ষিক এক লাখ ৮৯ হাজার ৫১২ দশমিক ২৫ টাকা জমায় লস্করপুর পরগণা চিরোস্থায়ী বন্দবস্ত হয়। অন্য ভাইদের তেমন খোঁজ পাওয়া যায় না। ভূবনেন্দ্র নারায়ণের আধিপাত্য লক্ষ্য করা যায়।
১৮০৬ সালে ভূবনেন্দ্র মারা যান। সম্পত্তির অধিকারী হন তার একমাত্র ছেলে জয় নারায়ণ। ১৮০৯ সালে তিনি ‘রাজা বাহাদুর’ উপাধী লাভ করে। স্ত্রী রানী ভবনময়ী, ছেলে কুমার বিশ্বেন্দ্র রায় ও কণ্যা কাশীশ্বরীকে জয় নারায়ণ ১৮১৬ সালে মারা যান।
রানী ভুবনময়ী ছিলেন জয় নারায়ণের দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী রানী জগদিশ্বরী নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেলে তিনি রানী ভুবনময়ীকে বিয়ে করেন। জয় নারায়ণের মৃত্যুর সময় তার ছেলে কুমার বিশ্বেন্দ্র নারায়ণের বয়স ছিল মাত্র ৪ বছর। কুমার বিশ্বেন্দ্র নারায়ণ ১৮২০ সালে মাত্র ৭ বছর বয়সে মারা যান। এ সময় রানী ভুবনময়ী সম্পত্তি নিজের অধীনে করে নেন। ওই বছরই রানী ভুবনময়ী মধুমালী এলাকার কৃষ্ণ নারায়ণ ঠাকুরের সাড়ে ৪ বছরের ছেলে হরনাথকে দত্তক নেন। তার নাম রাখেন হরেন্দ্র নারায়ণ।
১৮৩২ সালে রানী ভুবনময়ী সম্পত্তির ৬ আনা মেয়ে কাশীশ্বরী ও ১০ আনা ছেলে হরেন্দ্র নারায়ণকে লিখে দেন। সাবালক হওয়ার পরে হরেন্দ্র নারায়ণের সঙ্গে মায়ের মণমালিন্য হয় ও অন্য শরীকদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন।
হরেন্দ্র নারায়ণ দূর্গ সুন্দরী নামে এক নারীকে বিয়ে করেন। জগেন্দ্র নারায়ষণ ও দেবেন্দ্র নারায়ণ নামে তার দুই ছেলে ছিল। দেবেন্দ্র নারায়ণ অবিবাহিত অবস্থায় মারা যান। পিতার মৃত্যুর সময় জগেন্দ্র নারায়ণের বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর। জগেন্দ্র নারায়ণ মাত্র ১৫ বছর বয়সে ১৮৫৫ সালে সাড়ে ৫ বছর বয়সী শরৎ সুন্দরীকে বিয়ে করেন।
জগেন্দ্র নারায়ণ ছিলেন ইংরেজ বিদ্বেশী। নীলচাষ দমনের জন্য আন্দোলন করেন। ওই সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ইংরেজরা চিকিৎসা দিতে চাইলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। ১৮৬২ সালে ২১ বছর বয়সে মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি তার সব সম্পত্তি স্ত্রী শরৎ সুন্দরীর নামে দিয়ে যান।
১২ বছরে তিনি বিধবা হন। ১৮৬৫ আদালতের মাধ্যমে সম্পত্তির ভার নিজের হাতে গ্রহণ করেন। ১৮৬৬ সালে তিনি রাজশাহীর গুণাইপাড়া অধিবাসী কেশবকান্ত চক্রবর্তীর ছেলে রজনীকান্ততে দত্তক নেয়। রজনীকান্তের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় যতীনন্দ্র নারায়ণ। শরৎ সুন্দরী তিনি দানশীল ছিলেন। সে কারণে ব্রিটিশ সরকার ১৮৭৪ সালে তাকে ‘রানী’ ও পরবর্তীতে ১৮৭৭ সালে ‘মহারানী’ উপাধীতে ভূষিত করেন।
মায়ের পুরো মত না নিয়ে যতীন্দ্র নারায়ণ ১৮৮০ সালে ঢাকা জেলার ধুলা নিবাসী ভুবনমোহন রায়ের মেয়ে হেমন্ত কুমারী দেবীকে বিয়ে করেন। অসৎ সঙ্গে কারণে কুমারের শরীরে নানা রোগ দানা বাঁধে। অবশেষে ১৮৮৩ সালে তিনি মারা যান।
এদিকে জীবনের শেষ সময় মহারানী শরৎ সুন্দরী নানা সমস্যায় তিক্ত হয়ে ভারতের কাশীতে চলে যান। ১৮৮৬ সালে তিনি মারা যান। এরপরে হেমন্ত কুমারী দেবী মাত্র ১৮ বছর বয়সে পুঠিয়া জমিদারীর দায়িত্বভর গ্রহণ করেন। কিন্তু তার অপরিণিত বয়সের সুযোগে প্রকৃত কর্তৃত্ব চলে যায় পিতা ভুবনমোহন ও মামা ভৈরব চন্দ্রের হাতে। ১৮৯০ সালে ভুবনমোহন মৃত্যুবরণ করলে রাজবাড়ির দায়িত্ব পান ভৈরব রায়। ১৮৯৫ সালে মহারানী হেমন্ত কুমরীর একমাত্র মেয়ে রাজ কুমারী সুরেন্দ্র বালার সঙ্গে বিশ্বেশর স্যানালের বিয়ে হয়। বিয়ের মাত্র ১০ বছর পর ১৯০৫ সালে রাজকুমারী সুরেন্দ্র বালা মারা যান।
হেমন্ত কুমারী দেবী অনেক ভালো কাজের জন্য লর্ড কার্জনের আমলে ১৯০১ সালে ‘রানী’ ও ১৯২০ সালে লর্ড আর উইনের আমলে ‘মহারানী’ উপাধীতে ভূষিত হন। ১৯৪২ সালে মহারানী হেমন্ত কুমারী দেবী পরলোকগমন করেন। ১৯৫০ সালে সারা দেশে জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে গণজাগরণ ঘটে। মহারানী হেমন্ত দেবীর মৃত্যুর পরে অন্য জায়গাগুলোর মতো পুঠিয়া রাজবংশেরও বিলুপ্তি ঘটে।
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ১৮৪টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষিত পুরাকীর্তি আছে। এসবের মধ্যে রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ি অন্যতম। এখানে ১৪টি স্থাপনা সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণার মাধ্যেমে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর রক্ষণাবেক্ষণ করছেন।  এসবের মধ্যে একটি রাজবাড়ি ও অবশিষ্ট ১৩টি মন্দির। অধিকাংশ মন্দিরে পোড়ামাটির চিত্রফলক স্থাপিত আছে।
রাজবাড়ী: ভবনের সামনে দেয়ালে শ্বেত পাথরের খোদাইকরা লিপি থেকে জানা যায় যে ১৮৮৫ সালে মহারানী হেমন্তকুমারী দেবী রাজপ্রসাদটি নির্মাণ করেন। তিনি মহারানী শরৎসুন্দরী দেবীর শ্রদ্ধায় রাজবাড়িটি উৎসর্গ করেন।
পুঠিয়া বাজারের দক্ষিণে শ্যামসাগর নামে দিঘির পূর্ব পাশে ৪ দশমিক ৩১ একর জমির ওপরে আয়নাকার পরিকল্পনায় নির্মিত দ্বিতল রাজবাড়ির এখনো অনেক আকর্ষণীয়। পুরাকীর্তিগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে সুন্দর। চারিদিকে পুকুরবেষ্টিত উত্তরে মুখ করে প্রসাদটি দাঁড়িয়ে আছে।
রাজবাড়ির কাচারি অঙ্গনের উত্তর ও পশ্চিমের দ্বিতল দুইটি ব্লক ছাড়া প্রসাদের অন্য অংশ একতলা আকারে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রসাদটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে ইট, চুন, সুরকি, লোহা ও কাঠ।
কাছারি ও মন্দিরে প্রবেশের জন্য রাজবাড়িটির সম্মুখে পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে দুইটি গাড়ি বারান্দাসহ সুউচ্চ বিশাল ফটক বা রাজবাড়ির প্রবেশ তোরাণ। পশ্চিমের ফটক দিয়ে কাচারি অঙ্গন ও পূর্বপাশের ফটক দিয়ে মন্দির অঙ্গনে প্রবেশ করা যায়।
রাজবাড়ির সামনে দুই তলায় দুইটি ঝুল বারান্দা আছে। বারান্দা দুইটিতে উঠার জন্য কাঠের সিঁড়ি আছে। কাচারি অঙ্গনের উত্তর দিকের নিচ তলার কক্ষটি ট্রেজারি অফিস ছিল। দ্বিতীয় অংশে বড় হলরুমে রাজা বা রাণী রাজকর্মচারীদের সঙ্গে সভা করতেন এবং প্রজাসাধারণের সঙ্গে মিলিত হতেন। পূর্ব ও পশ্চিম ব্লকের রুমগুলো জমিদারি কাগজ সংরক্ষণ বা মহাফেজখানা হিসেবে দৈনন্দিন জমিদারি কার্যাদি সম্পাদক করার জন্য ব্যবহৃত হতো।
কাছারি অঙ্গণে রাজা ও রাণী রাজকার্য পরিচালনা করতেন। পশ্চিম ব্লকের নীচতলায় দোষী ব্যক্তিদের শস্তিদানের ব্যবস্থা ছিল। পশ্চিমাংশের একটি কক্ষে কয়েকটি গভীর কুয়া আছে। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ব্যক্তিদের ওই কুয়ায় ফেলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো বলে জানা যায়।
রাজবাড়ির রুমগুলো ভেতর ও বাইরে পলেস্তারের আস্তরণ আচ্ছাদিত এবং সম্মুখভাগে আকর্ষণীয় ইন্দো-ইউরোপিয় স্থাপত্যরীতির প্রভার লক্ষ্য করা যায়। কক্ষগুলো বর্গাকার ও আয়তকার। রাজবাড়ির দেয়াল ও বড় বড় পিলারগুলোতে খোদায় করা নানা ভাস্কর্য আছে। বর্তমানে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর রক্ষণাবেক্ষণ করলেও মূলত এটি অরক্ষিত আছে। প্রধান ফটক দিয়ে দুই তলায় উঠা কাঠের সিঁড়িটি ভেঙে গেছে। দুই তলার বারান্দাটি অরক্ষিত আছে। কক্ষগুলোতে চামচিকা বাসা বেঁধেছে।
বেশিরভাগ দরজা-জানালা ভেঙে গেছে। ভবনের সামনের অংশ ঠিক থাকলেও পেছন ও পাশের অংশগুলো নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে। বেশির ভাগ জায়গার পলেস্তার উঠে গেছে। সরে যেতে শুরু করেছে দেয়ালের ইট।
মূল রাজবাড়ী (পাঁচআনী রাজপ্রসাদ) থেকে ১শ মিটার পশ্চিম দিকে শ্যামসাগর নামে দিঘির দক্ষিণ পাড়ে চারআনী রাজপ্রসাদটি অবস্থিত। এ রাজবাড়ীর পাশে এক জায়গায় বড় আহ্নিক মন্দির, গোপাল মন্দির ও ছোট গোবিন্দ মন্দির অবস্থিত।
চারআনী রাজবাড়ি: জমিদারি কাজ সম্পন্ন করার জন্য রাজপ্রসাদ অঙ্গনে বিভিন্ন অফিস ভবন, রাজকর্মচারীদের আবাসস্থাল, হাতিশালা ও ঘোড়াশাল ব্যবস্থা ছিল। বর্তমানে শুধু প্রধান তোরাণ এবং কাছারি অঙ্গন অর্ধভগ্ন অবস্থায় থাকলেও অন্যান্য ইমারত ধ্বংসপ্রাপ্ত। ১৯৭১ সালে এ ইমারতের ব্যপক ক্ষতি হয়। বর্তমানে কেবল কাছারি ভবন ও ট্রেজারি ভবন ইমারত দুইটি কোনোমতে টিকে আছে।
এ রাজবাড়ীর প্রবেশের জন্য উত্তর দিকে বিশাল ও সুউচ্চ তোরাণটি অবস্থিত। এ ইমারত নির্মাণে ইট, চুন, সুরকি, কাঠ ও লোহা ব্যবহৃত হয়। চারআনী রাজবাড়ির প্রধান প্রবেশ কাছারি বাড়ি, খাজাঞ্চিখানা ও অন্য কক্ষগুলোর অভ্যন্তর ও বহির্ভাগ সম্পূর্ণটাই পলেস্তারের আস্তরণে আচ্ছাদিত। প্রধান প্রবেশ তোরণের সম্মুখস্থ অক্টোগোনাল স্তম্ভগুলো নান্দনিক। এ চারআনী রাজবাড়ীর পাশের অঙ্গনে তিনটি মন্দির অবস্থতি। এগুলো হলো-বড় আহ্নিক মন্দির, গোপাল মন্দির ও ছোট গোবিন্দ মন্দির।
বড় আহ্নিক মন্দির: পুঠিয়া রাজবাড়ির পশ্চিম পাশে দিঘি। তার পশ্চিম তীরেই রয়েছে পূর্বমুখী বড় আহ্নিক মন্দির। কারুকার্য মণ্ডিত এ মন্দিরের নির্মাণশৈলী বেশ আকর্ষণীয়। উত্তর-দক্ষিণ লম্বা আয়তনের মন্দিরটির মাপ ১৪ দশমিক ৬০ মিটার গুণ ৪ দশমিক ৪৫ মিটার। পূর্বমুখী এই মন্দিরে পাশাপাশি ৩টি কক্ষ আছে।মাঝের কক্ষের আয়তন সবচেয়ে বড়। পূর্ব দিকে ৩টি খিলান পবেশ পথ এবং উপরে দৌচালা আকৃতির ছাদ আছে। আয়তকার কক্ষের দক্ষিণ ও উত্তর পাশে চৌচালা আকৃতির ছাদ বিশিষ্ট দুইটি কক্ষ বর্গাকার এবং চার চালা ছাদ দ্বারা আচ্ছাদিত। মন্দিরের পূর্বপার্শ্বে সম্মুখ দেয়াল বিভিন্ন ধরণের পোড়ামাটির ফলক চিত্র দ্বারা সজ্জিত। স্থাপিত বিন্যাস অনুযায়ী মন্দিরটি ১৭/১৮ শতকে নির্মিত বলে অনুমিত হয়।
ছোট গোবিন্দ মন্দির: বড় আহ্নিক মন্দিরের পাশে ছোট গোবিন্দ মন্দির অবস্থিত।  মন্দিরটির প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৮৫ মিটার। এককক্ষ বিশিষ্ট মন্দিরের পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে সরু বারান্দা এবং পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ দেয়ালে একটি করে প্রবেশ পথ আছে। মন্দিরের চার পাশের কর্ণার ও দরজার দুই পাশ পোড়ামাটির চিত্রফলক দ্বারা নান্দনিকভাবে সজ্জিত। বারান্দার সঙ্গে দক্ষিণ দিকে ৩টি এবং পূর্ব দিকে একটি খিলান প্রবেশ পথ আছে। কার্ণিশ ধনুকের মতো বাঁকানো এবং উপরে একটি ফিনিয়েল বিশিষ্ট চূড়া আকৃতির ছাদ আছে। পশ্চিম ও উত্তর পাশের বাইরের দেয়াল সমতল এবং কোনো অলংকরণ না থাকলেও পূর্ব ও দক্ষিণ দেয়ালে পোড়ামাটির চিত্রফলক দ্বারা অলংকৃত।
গোপাল মন্দির: বড় আহ্নিক মন্দিরের পাশে দক্ষিণমুখী অবস্থানে আছে গোপাল মন্দির। ১২.৮০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭.৮০ মিটার প্রস্থ। মন্দিরের দক্ষিণ দিকে ৩টি এবং পূর্ব ও পশ্চিম দিকে একটি করে প্রবেশ পথ আছে। দক্ষিণ দিকে মুখ করা মন্দিরের উত্তর দিক ছাড়া অন্য সবদিকেই বারান্দা আছে। পশ্চিম দেয়ালে একটি প্রবেশ দ্বার আছে। নীচের প্রধান প্রবেশ মুখে একটি পোড়ামাটির মূর্তি স্থাপিত আছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন