Breaking

মঙ্গলবার, ২৯ মে, ২০১৮

মাফিয়া জগতের বাদশাহ "দাউদ ইব্রাহিম" এবং কিছু না জানা কথা

দাউদ ইব্রাহিম ভারতের মুম্বাই শহরের সংগঠিত অপরাধ চক্রের প্রধান হিসেবে পরিচিত। তার বিভিন্ন অপরাধের জন্য ২০০৮ সালে ইন্টারপোল এর মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় এবং ফোর্বস (মার্কিন সাময়িকী ) এর বিশ্বের জঘন্যতম পলাতক অপরাধীর তালিকায় ৪র্থ স্থানে ছিলেন।

দাউদ ইব্রাহিম ভারতের পলাতক অপরাধীদের তালিকায় ও শীর্ষ স্থানে রয়েছেন।

ন্ডিয়ান সুপ্রীম কোর্ট এর রায় অনুসারে তিনি ১৯৯৩ সালের ১২ই মার্চ মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জ এর সিরিজ বোমা হামলার সাথে সরাসরি জড়িত।

ঐ বোমা হামলায় ৩১৫ জন নিরিহ লোক নিহত হয় যাদের মধ্যে ২৫৭ জন ছিলেন সরকারি।

দাউদ ইব্রাহিম প্রায় ৫ হাজার সদস্য নিয়ে সিন্ডিকেট করেছেন যার নাম ডি কোম্পানি।

তাদের কর্মকাণ্ড ভারত পাকিস্তান সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে যদিও ভারত দাবী করছে দাউদ ইব্রাহিম পাকিস্তানে পালিয়ে গেছেন এবং সেখানে আছেন। পাকিস্তান বারবার এই দাবী অস্বীকার করে আসছে।

দাউদ ইব্রাহিমের জীবন কাহিনী
দাউদ ইব্রাহিম ভারতের শীর্ষ স্থানীয় অপরাধী ও মাফিয়াদের মধ্যে অন্যতম। তাকে সবাই দাউদ ইব্রাহিম নামে জানলেও তার আসল নাম দাউদ ইব্রাহিম কাসকার।

তার জন্ম ২৭ ডিসেম্বর ১৯৫৫ ও জন্মস্থান রত্নগিরি জেলা, মহারাষ্ট্র, ভারত।

দাঊদ ইব্রাহিম কে মাফিয়া জগতের বাদশাহ হিসেবে চিনেন অনেকে। তার পিতা ইব্রাহিম কাসকার পুলিশের প্রধান কনস্টেবল ছিলেন।

তার উত্তরসূরি সকলেই মুসলিম সম্প্রদায়ের ছিলেন। তিনি অপরাধ সম্রাজ্য বিস্তৃত করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি মুম্বাইয়ের করিম লালা গ্যাং এর হয়ে কাজ করতেন।

সর্বশেষ রেকর্ড অনুযায়ী তার বর্তমান সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৭.৫ হাজার কোটি রুপির বেশি।

দাউদ ইব্রাহিম Zubeena Zareen
দাম্পত্য জীবনের দাউদ ইব্রাহিম এর সংগী হিসেবে আছেন জুবিনা জেরিন।  দাউদ ইব্রাহিম Zubeena Zareen এর  দুই মেয়ে সন্তান। তাদের একজনের নাম মাহরুখ ইব্রাহিম আরেকজন মারিয়া ইব্রাহিম।

যুক্তরাজ্য থাকাকালীন সময়ে মাহরুখ ইব্রাহিম এর সাথে জাবেদ মিয়াদাদ এর ছেলের সাথে পরিচয় হয়। জাবেদ মিয়াদাদ তৎকালীন সময়ে পাকিস্তান এর নামকরা ক্রিকেটার ছিলেন। পরে তাদের দুজনের বিয়ে হয়। মারিয়া ইব্রাহীম ১৯৮৮ সালে মারা যায়।

দাউদ ইব্রাহিম তার ভাই বোনদের মধ্যে বড়। তার এক ভাই নোরা ২০০৯ সালে ৩০ মার্চ ঘুমের মধ্যে মারা যায়। আরেক ভাই ইকবাল কাসকার দাঊদ থেকে ১০ বছরের ছোট।

ইকবাল কাসকার দাউদ ইব্রাহিম এর মুম্বাই এর ব্যবসা দেখাশোনা করেন। তার বোন হাসিনা পারকার এর বয়স ৫২ বছর।

হাসিনা পারকার আরব আমিরাত থেকে ইকবালের আগমন এর পূর্বে দাঊদ ইব্রাহিম এর ব্যবসা দেখাশোনা করতেন।

দাউদ ইব্রাহিম মাফিয়া ডন এর ছোটবেলা
দাঊদ এর ছোটবেলা কেটেছে ভারতের ডোংরী এলাকার তেমকার মহল্লায়। খুব একটা বেশি পড়ালেখা করেনি দাউদ ইব্রাহিম। তবে যেটুকু করেছেন সেটা ভারতের আহমেদ সেলর হাই স্কুলে করেছেন।

স্কুলে পড়াশোনা কালীন সময়ে খারাপ বন্ধুদের সাথে মিশে চুরি ডাকাতী শুরু করেন তিনি। তার ছোট ভাই ইকবাল কাসকার এবং পরিবারের নানা সদস্যরা এখন ভারতের মুম্বাইয়ে বাস করেন।

মুম্বাই পুলিশের হেড কনস্টেবল এর ছেলে দাউদ ইব্রাহিমের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে হাতেখড়ি মাত্র ১৪ বছর বয়সে।

ওই সময় ভারতের মুম্বাই রেলস্টেশনে টাকা গোনার সময় এক ব্যক্তির হাত থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে দৌঁড় দেন তিনি।

তার খবর বাবা ইব্রাহিম কাসকারের কানে পৌঁছলে তিনি দাউদ ইব্রাহিমকে ব্যাপক মারধর করেন । কারণ তার বাবা ইব্রাহিম কাসকার ব্যক্তিগত ভাবে খুবই সৎ ছিলেন। তিনি হযরত দাউদ (আ.) (নবী) নামে ছেলের নাম রেখেছিলেন দাউদ ইব্রাহিম।

কিন্তু নবীর মতো ছেলের খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়েনি, অপরাধের খ্যাতি ছড়িয়ে।

অপরাধ জীবনের শুরুর দিকে দাউদ ইব্রাহিম করিম লালা এবং হাজি মাস্তান এর হয়ে কাজ করতেন, কিছু সময় পর তিনি তাদের দুজন থেকে আলাদা হয়ে যান।

দাঊদ ইব্রাহিম এর শখ
দাউদ ইব্রাহিম এর জীবন ধারা অনেক সৌখিন ছিল। তিনি সবমসময় সবকিছুতে সেরা হতে চেষ্টা করতেন। সেরার প্রতি তার সবসময় লোভ ছিলো। সে সময়ে বলিউড এর অনেক বড় বড় পার্টির উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি।

সেই পার্টি গুলো থেকেই মন্দাকিনী কে নিজের জন্য পছন্দ করেন তিনি। মন্দাকিনী সেসময়ে বলিউড এর জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন।

তার মেয়ে মাহরুখের স্বামী জুনায়েদ মিয়াদাদ পাকিস্তান এর সাবেক ক্রিকেটার জাবেদ মিয়াদিদ এর ছেলে। তখন থেকে দাঊদ ধীরে ধীরে ক্রিকেট এর সংগে যুক্ত হতে শুরু করেন।

দামী ও পুরানো ওয়াইন এবং সাদা কালো ঘোড়া এইসবের প্রতি খুব সৌখিন তিনি।

দাউদ ইব্রাহিম এর অপরাধের হাতেখড়ি
অনেকে বলে দাউদ ইব্রাহিম অপরাধ  জগতে পা রেখেছিলেন ভাই শাবির ইব্রাহিম এর হাত ধরে। সে সময়ে ভারতের ডোংরি এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ছিল বাসু দাদা।

বাসু দাদার গ্রুপকে ঠেকানোর জন্য, তাদের ব্যবসা দখল করার জন্য শাবির এবং দাউদ ইব্রাহিম মিলে নিজেদের একটি কোম্পানি তৈরি করেন যার নাম ছিল ‘ইয়ং’ কোম্পানি।
কিছুদিন পর ইয়ং কোম্পানি নাম বদলে রাখা হয় ‘ডি কোম্পানি’।
ধীরে ধীরে দাউদ ইব্রাহিম ডি কোম্পানিকে আন্তর্জাতিক সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র হিসেবে গড়ে তোলেন।
দাউদের সকল অপরাধমুলক কাজ যেমন হত্যা, গুম, মাদক ব্যবসা, চোরাচালান, অপহরণ, চাঁদাবাজি অবং অন্যান্য অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে ডি কোম্পানি।
শাবির ও দাউদ ইব্রাহিম আর তাদের গ্রুপ মিলে লোহার রড আর খালি সোডার বোতল দিয়ে পিটিয়ে বাসু দাদা আর তার শীষ্যদের এলাকা ছাড়া করেন। এরপর ভারতে আর দেখা যায়নি বাসু দাদা ও তার দলকে।

সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে অপরাধ মহলে খুব সহজে যায়গা করে নেয় ডি কোম্পানি।

ডি কোম্পানির উত্থান
আন্ডারওয়ার্ল্ড জগতে শুরুতে করিম লালা গ্যাং এর হাত ধরে দাউদ পা রাখেন। তখন করিম লালা গ্যাং ছিলো ভারতের কুখ্যাত ডন। তখন ভারতের মুম্বাইয়ে করিমের রাজ চলত।

কিন্তু আশির দশকের শুরুর দিকে করিম লালার জায়গা দখল করে দাউদ ইব্রাহিম এবং ধীরে ধীরে দাঊদ ইব্রাহিম মাফিয়া ডন হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করেন। পুরো আন্ডারওয়ার্ল্ড জগত চলে আসে দাউদ ইব্রাহিম এর দখলে।ক্রিকেট জগতে দাউদ ইব্রাহিম

সে সময় দাঊদ ইব্রাহিম বেটিং এবং বলিউড এর ছবি প্রযোজনা করতো। ছোটা রাজনের সংগে তার প্রথম আলাপ হয় বেটিং এর সময়।

কিছুদিন পর তিনি ভারতের মুম্বাইয়ে হাওলা থেকে অস্ত্র পাচার এর কাজ শুরু করেন। কিছুদিন অস্ত্র ব্যবসা করার পর তিনি ভারত ছেড়ে দুবাই চলে যান। দুবাই যাওয়ার পিছনে প্রধান কারন ছিলো নাছোড়বান্দা মুম্বাই পুলিশ। দুবাইয়ে তিনি দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় অপরাধ সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। তার সিন্ডিকেট এর নাম ‘ডি কোম্পানি’।

১৯৯৩ সালে মুম্বাই এর সংঘটিত বোমা হামলায় এবং অন্যান্য অপরাধ কাজে তিনি দোষী হিসেবে প্রমাণিত হওয়ার পর ভারত থাকে মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল ঘোষণা করেন। এবং সেই সময় থেকেই আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন হিসেবে পরিচিত হন বিশ্বব্যাপী।

মুম্বাই এর ইতিহাসে প্রথম গ্যাং ওয়ার (Gang-War)
আশির দশকের গোড়াতে ভারদরাজন মুদালিয়ার চেন্নাইয়ে পালিয়ে যায়। ভারদরাজন ছিলেন উত্তর-পূর্ব মুম্বাইয়ের নাম করা আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন।

সে সময়ে হাজি মাস্তানও অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে ছিল। তখন মুম্বাইয়ে রাজত্ব চলছিল করিম লালা গ্যাং এর। কিন্তু দাউদ-শাবির দু’ভাই নানা রকমের স্বপ্ন দেখছিল মুম্বাইকে নিয়ন্ত্রণ করার।

কিছুদিন পর করিম লালা গ্যাং এর সঙ্গে ডি কোম্পানির ক্ষমতা দখল নিয়ে যুদ্ধ বেধে যায়।

ভারতের মুম্বাইয়ের ইতিহাসে এই যুদ্ধই ছিল ১ম গ্যাং ওয়ার। ধীরে ধীরে অবস্থা খারাপের দিকে যেতে শুরু করে।

আন্ডারওয়ার্ল্ড এর অপরাধীরা খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে।

এই অবস্থার সমাধান করার জন্য সমনে এগিয়ে আসেন মুম্বাইয়ের আরেক ডন হাজি মাস্তান। করিম লালা গ্যাং এবং ডি কোম্পানি উভয়ের কাছে হাজির গ্রহণযোগ্যতা ছিল। শেষপর্যন্ত হাজির সামনে দুইপক্ষ পবিত্র কোরআন শরীফ ছুঁয়ে লড়াই না করার ওয়াদা করেন।

কিন্তু ভিতরে ভিতরে কোন পক্ষই এই সমঝোতা নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলনা। কিছুদিন পর আবার সংঘাত শুরু করেন করিম গ্যাং এর আমিরজাদা আর আলমজেব।

তারা শাবিরকে হত্যা করার চিন্তা করে,পরে তারা দুজন মিলে আগর বাজারের উঠতি সন্ত্রাসী মান্য সুরভের সাথে দেখা করেন। বিরাট অংকের টাকার লোভ দেখিয়ে সুরভকে কিনে নেয় তারা।

মাফিয়া ডন আন্ডারওয়ার্ল্ড সম্পদ

১৯৮১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী সুরভ এবং তার দল শাবিরকে হত্যা করে। ঐদিন শাবির তার প্রেমিকা চিত্রাকে নিয়ে তার বান্দ্রার বাড়িতে যাচ্ছিলেন।

মাঝপথ থেকেই সুরভ বাহিনী,আমিরজাদা এবং আলমজেব শাবিরের গাড়ির পিছু নেয়।

কিছুদূর যাওয়ার পর শাবির তেল নেওয়ার জন্য প্রভাদেবি এলাকার বিনায়ক মন্দিরের পাশে একটি পেট্রোল পাম্পে তার গাড়ি থামান।

গাড়ি থামানোর কয়েক মিনিট পর তাকে ঘিরে ফেলে ঘাতকরা।

চিত্রা গাড়ি থেকে নামা মাত্রই চারদিক থেকে বৃষ্টির মত গুলি করা হয় শাবিরকে। সেখানেই মারা যান শাবির।

এরপর সুরভ বাহিনী দাউদের বাসায় আক্রমণ করার জন্য রওনা হয়।

কিন্তু দাউদ এর প্রধান সহযোগী খালিদ দূর থেকে তাদের চিনতে পেরে বাড়ির প্রধান ফটকের স্টিল গেটটি আটকে দেয়।

তাই সুরভ বাহিনী বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে পারেনি।

তবে বেশকিছুক্ষণ দুপক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হলেও কেউ গুরুতরভাবে আহত হয়নি। পুলিশের হস্তক্ষেপে সেইদিনের যুদ্ধ বেশিদুর গড়াতে পারেনি।

ভিন্ন ভিন্ন নামধারী দাঊদ ইব্রাহিম 
দাঊদ ইব্রাহিম বিভিন্ন সময়ে নিজের নাম লুকানোর চেষ্টা করেছেন।

“ডোংরী সে মুম্বাই তাক” এই বইতে তার তেরটি নাম উল্লেখ করা হয়। বইটি লিখেছেন এস হুসেন জেডি।

দাউদ ইব্রাহিম ঘন কালো গোঁফ এর জন্য অপরাধ জীবনের শুরুতে “মুচ্ছাড়” নামে পরিচিত ছিলেন।
ভারত থেকে দুবাই পালানোর সময় অনেকবার তিনি নিজের নাম পরিবর্তন করেন।
নিজের চেহারাতে পরিবর্তন আনার জন্য অনেকবার তিনি মুখে প্লাস্টিক সার্জারি করেন বলে শোনা যায় ।
তার বিভিন্ন ছদ্মনাম এর মধ্যে তাকে অনেকে শেখ দাঊদ হাসান নামে চিনতো।
অনেকের কাছে তিনি ডেভিড নামেও পরিচিত।
তিনি যখন ভারতে ফোন করতেন তখন নিজের পরিচয় বদলে নিজেকে হাজী সাহেব নামে পরিচয় দিতেন সবাইকে।

ক্রিকেট জগতে দাউদ ইব্রাহিম
অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি ব্যবসা শুরু করলো ইব্রাহিম। মুম্বাইয়ের আন্ডারওয়ার্ল্ড থেকে প্রচুর অর্থ ইনকাম করেছে সে।

শিপিং ব্যবসা, এয়ারলাইন্স, রিয়েল এস্টেট ব্যবসা সব জায়গায় অর্থ খাটিয়ে মুনাফা  করেছে সে।

এরপর ক্রিকেটের দিকে নজর পড়ে তার। বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়দের সাথে ভালো সম্পর্ক ছিলো তার।

এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ভারত, পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়রা।

এদের অনেকেই দাউদের হয়ে ম্যাচ ফিক্সিং করতেন। কেউ টাকার লোভে, কেউ বাধ্য হয়ে, আবার অনেকে স্বেচ্ছায় ও ম্যাচ ফিক্সিং করতেন।

বলিউড জগতে ভালোই প্রভাব ছিল দাউদের। দুবাই থাকাকালীন সময়ে মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ড এর নিয়ন্ত্রণ করতো সে।

তবে এর পিছনে মূল কৃতিত্ব ছিল তার ডান হাত ছোটা শাকিল ও আপন বোন হাসিনা পারকারের।

অনেকে বলেন, ২০০৩ সাল অবধি মুম্বাইয়ে অপরাধ জগত একহাতে সামলেছিলেন হাসিনা পার্কার, সে সময় দাউদ ইব্রাহিম দুবাইয়ে ছিলেন।

বলিউড জগতে দাউদ ইব্রাহিম
কথিত আছে যে, দাউদ ইব্রাহিম বেনামে বলিউডের অনেক সিনেমায় অর্থ বিনিয়োগ করেছিলেন।

সালমান খানের বহুল জনপ্রিয় “চোরি চোরি চুপকে চুপকে” সিনেমাটি দাউদের অর্থায়ন এবং প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছিল।

বলিউডের অনেক জনপ্রিয় নায়িকার সঙ্গে দাউদের অন্তরঙ্গ সম্পর্কের কথা শোনা গেছে অনেকবার।

দাউদ ইব্রাহিমের বাড়িতে চা খেয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন ঋষি কাপুর, বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা। তার আত্নজীবনীতে তিনি লিখেছিলেন।

অভিনেতা হওয়ার সুবাদে খ্যাতিমান মানুষের সঙ্গে  সঙ্গে অনেক কুখ্যাত সন্ত্রাসীর সাথেও তার পরিচয় হয়।দাউদ ইব্রাহিম তাদের মধ্যে একজন ছিলেন।

তিনি বলেন, দাউদ ইব্রাহিম এর সাথে তার পরিচয় হয় ১৯৯৩ সালের বোমা হামলার আগে, তাই তিনি জানতেন না যে দাউদ একজন সন্ত্রাসী ছিলেন।

ঋষি কাপুর বলেন “দাউদ আমাকে বলেছিলেন তিনি নিজ হাতে কখনো মানুষ খুন করেননি। কিন্তু ছোটখাটো অপরাধ করেছেন। তাই তার নামে মুম্বাই আদালতে খুনের মামলা চলছিল”।

ঋষি কাপুর আরো জানিয়েছেন একটি ঘটনার কথা, সে ঘটনাতে নাকি দাউদের দলবলের হাতে ভারতের আদালত প্রাঙ্গণে প্রাণ হারান এক ব্যক্তি।

দাউদ ইব্রাহিম বলেছিলেন, মিথ্যা কথা বলেছিল ঐ লোক “আল্লাহর নির্দেশ অমান্য” করেছিল ঐ লোক; তাই “আল্লাহর বান্দা হিসেবে তার মাথার খুলি উড়িয়ে দেয়া ছিল তাদের কর্তব্য।”

ঋষি কাপুর বলেন এই ঘটনাটি ১৯৮৫ সালে রাহুল রাওয়াল তার “অর্জুন” সিনেমাতে তুলে আনেন। পরবর্তিতে ঋষি কাপুর দাউদের ভূমিকায় নিখিল আদভানির “ডি-ডে” সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। অভিনয়ের সময় (দাউদের চরিত্রে) তার সাথে পরিচয়ের সব অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছিল বলে জানান ঋষি কাপুর।

দাউদ ইব্রাহিম কে নিয়ে বলিউড মুভি
দাউদ ইব্রাহিম সাধারণ মানুষের কাছে একটি রহস্য। তাই তাকে নিয়ে অনেক কৌতুহল রয়েছে মানুষের মনে।

আর তাই তার অপরাধ জীবনে গঠিত বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে বলিউড এ কিছু মুভি তৈরী করেছন পরিচালকেরা।

চলচিত্রগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঃ

কোম্পানি ( ২০০২ )
ডি কোম্পানি ( ২০০৫ )
ডি ডে ( ২০১৩ )
ব্ল্যাক ফ্রাইডে ( ২০০৭ )
সুট আউট এট লোকান্ড ওয়ালা ( ২০০৭ )
ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মুম্বাই ( ২০১০ )
সুট আউট এট ওয়াডালা ( ২০১০ )
দাউদ ইব্রাহিম এর বোন হাসিনা পারকার (Haseena parkar) কে নিয়ে সম্প্রতি একটি সিনেমা তৈরী হচ্ছে এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে মানে হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছেন শ্রদ্ধা কাপুর।

দাউদ ইব্রাহিম এর বর্তমান অবস্থা
বিভিন্ন মাধ্যম থেলে শোনা যায় দাউদ ইব্রাহিম এর শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো নেই।

এখন নাকি একা একা হাটাঁর ক্ষমতা নেই। প্রায় সাত বছর হলো অপরাধ জগত থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি।

তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে হাজারো খবর বের হচ্ছে। কেউ বলছে তিনি হয়তো মারা গেছেন কেউ বলছে তিনি হ্রদ রোগে আক্রান্ত।

আবার কেউ বলছেন তার হাত পা অবশ হয়ে গেছে। তবে তার ছোট ভাই শাকিল বলেছেন তিনি সুস্থ্য ও স্বাভাবিক রয়েছেন।

শেষকথা

বছরের পর বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তাকে খুজে বেড়াচ্ছেন।

হাজার হাজার নিরিহ মানুষের প্রান কেড়ে নেওয়া এই খুনীকে ধরার জন্য অনেক রাস্তা বের করেছেন ভারতীয় পুলিশ।

কেউ বলে তিনি এখানেই আছেন, তিনি ওখানে আছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত তার নাগাল পাওয়া যায়নি।

“ডন কো পাকাড়না মুশকিল হি নেহি না মুমকিন হ্যায়” বাক্যটির সাথে দাউদ ইব্রাহিম একদম মিলে যায়।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে ভারত ও পাকিস্তানে তার অনেক ভক্ত রয়েছেন।

তবে সবকিছুর উপরে সত্যিটা হলো যে মানুষটার হাতে লেগে আছে হাজারো নিরপরাধ মানুষের রক্ত তার নাম দাউদ ইব্রাহিম!!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন