১১০২ বঙ্গাব্দে নির্মিত হয় সুখাইর জমিদার বাড়ি। সুখাইরের জমিদার মোহন পাল ১৬৬৫ সালে ২৫ একর জমির ওপর বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। সে সময়ে ৩২ পরগনায় বিভক্ত ছিল সুনামগঞ্জ। জমিদারির চতুর্সীমা ছিল পূর্বে জামালগঞ্জ, পশ্চিমে ধর্মপাশা, উত্তরে বংশীকুণ্ডা ও দক্ষিণে গাগলাজুর।
জমিদার বাড়িতে ছিল আকর্ষণীয় বাংলো, জলসাগর, গুদামঘর, কাচারিঘর, রেস্টহাউস ও চারটি থাকার ঘর। সদ্য অতীতে তা বিলীন হলেও এখনও বেশ আকর্ষণীয় এ জমিদার বাড়িটি। কথিত রয়েছে, সুখাইড় জমিদারির সীমানা গজারিয়া নদীর উত্তরপাড় থেকে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে জমিদারদের বিরুদ্ধে যে নানকার বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল তার সূত্রপাত সুখাইর জমিদার বাড়ি থেকেই।
ইতিহাস : মুঘল শাসনামলে হুগলি থেকে আসাম যাওয়ার পথে মহামানিক্য দত্ত রায় ভাটির প্রকৃতি-রূপ-ঐশ্বর্যে বিমোহিত হয়ে সুখাইর অঞ্চলে জায়গা কিনেন। ১৯০২ বঙ্গাব্দে জমিদারদের প্রথম পুরুষ বিশ্বনাথ চৌধুরীর আমলে ২৫ একর জায়গা নিয়ে শুরু হয় মূল স্থাপনা। কয়েক পুরুষের চেষ্টায় শেষ হয়েছিল বাড়ির নির্মাণকাজ। জমিদারি যুগে সুনামগঞ্জ ছিল ৩২টি পরগনায় বিভক্ত। দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলীর কারণে সুখাইর জমিদার বাড়ি হাওর রাজ্যের রাজমহল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল।
এক সময় এ বাড়ির মালিকানায় ছিল ধানকুনিয়া বিল, চারদা বিল, কাইমের দাইড়, সোনামোড়ল, পাশোয়া, ছাতিধরা, রাকলা, বৌলাই, নোয়ানদী, চেপ্টা এক্স হেলইন্নাসহ ২০টি জলমহাল।
সুখাইড় জমিদার বাড়ি এখনও ঐশ্বর্যময় দিনগুলোর সাক্ষী বহন করছে।
বর্তমানে অযত্ন-অবহেলা ও সরকারের উদাসীনতায় প্রত্নতত্ত্বের সম্ভাবনাময় স্থান এবং মুঘল আমলের নিদর্শনগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। জলসাঘর, বৈঠকখানা, বাংলা, বিশ্রামাগার, দুর্গামন্দির ইতোমধ্যে ধসে গেছে। এককালে যে জমিদার বাড়িকে আবর্তিত করে পরিচালিত হত প্রজাব্যবস্থা, তার চার ভাগের মধ্যে এখনও বড়বাড়ি, মধ্যমবাড়ি ও ছোটবাড়ি টিকে আছে। জমিদারি পতনের পর বাড়িগুলোর অনেক বদ্ধঘর ও সিন্দুক রয়েছে; যা আজও খোলা যায়নি। অযত্নে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বাড়ির দেয়ালের নান্দনিক কারুকার্যগুলো। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও সরকার উদ্যোগী হলে নতুন কিছু আবিষ্কারেরও সম্ভাবনা রয়েছে।সুকাইর জমিদার বাড়ি।
৩শ বছরের পুরনো সুখাইর জমিদার বাড়িটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বাড়ি দুটি আমাদের ঐতিহ্যের স্মারক ও জাতীয় সম্পদ। এগুলো সংস্কার ও সরক্ষণ করলে পর্যটন শিল্পসমৃদ্ধ হবে। সেই সঙ্গে আমাদের গর্বিত ঐতিহ্য সম্পর্কে ভবিষ্যত প্রজন্ম জানতে পারবে।
বেদখল হয়ে গেছে এই জমিদার বাড়ির বেশিরভাগ সম্পত্তি। গ্রামের লোকেরা কেউ কেউ গরু বেঁধে রাখে। অযত্ন অবহেলায় গাছ গাছালিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন