Breaking

শনিবার, ২৯ মে, ২০২১

৫/২৯/২০২১ ০৪:০৮:০০ PM

ইহুদি ঘরে জন্মানো এক খ্রিস্টান ভাষাবিদ এবং ব্রিটেনের শাহজাহান মসজিদ

 


এই গল্পের মুখ্য চরিত্র এক বহুভাষাবিদ পণ্ডিত। নাম তার গটলিয়েব উইলহেম লেইটনার। জন্ম ১৮৪০ সালের ১৪ অক্টোবর, পেস্টে; যেটি বর্তমানে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের অংশ।


চাইল্ড প্রডিজি ছিলেন লেইটনার। ১৮৫০ সালে, বয়স দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছানোর আগেই, বেশ কিছু ইউরোপীয় ভাষায় অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করে ফেলেন তিনি। তাই তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় কনস্ট্যান্টিপোলে (বর্তমান ইস্তাম্বুল), তুর্কি ও আরবি ভাষা শিখতে। আর বয়স ১৫ অতিক্রমের আগেই, ক্রিমিয়ায় ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে দোভাষীর কাজ আরম্ভ করে দেন তিনি।


লেইটনারের ভাষাজ্ঞান যেমন ছিল অবিশ্বাস্য (মোট ১৫টি ভাষা নখদর্পণে ছিল), তার ধর্মীয় ইতিহাসও কিন্তু কম চমকপ্রদ নয়। জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন একজন ইহুদি, কেননা তার পরিবার ছিল ওই ধর্মের। সৎ বাবার কাছ থেকে খ্রিস্টীয় পরিচয়ও পেয়েছিলেন তিনি, এবং শৈশবে বেড়েও উঠেছিলেন একজন প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান হিসেবে। অথচ সারাটা জীবন জ্ঞানচর্চা ও শিক্ষকতার পাশাপাশি আরেকটি কাজ করে গেছেন তিনি। সেটি হলো: ইসলামের প্রচার।

গটলিয়েব উইলহেম লেইটনার; Image Source: Wikimedia Commons

কীভাবে জন্মাল ইসলামের প্রতি লেইটনারের এত টান? এক্ষেত্রে কনস্ট্যান্টিপোলে গিয়ে তুর্কি ও আরবি ভাষা শিক্ষা, তারপর বিভিন্ন মুসলিম দেশে ভ্রমণের একটা প্রভাব তো ছিলই। কথিত আছে, মুসলিম দেশসমূহে ভ্রমণকালে নাকি তিনি একটি মুসলিম নামও গ্রহণ করতেন: আব্দুর রশীদ সায়াহ (সায়াহ অর্থ ভ্রমণকারী)।


তাছাড়া বয়স যখন সদ্য বিশের কোঠায়, তখনই লন্ডনের কিংস কলেজে আরবি ভাষার অধ্যাপক বনে যান লেইটনার। সেখান থেকে তার পরবর্তী গন্তব্য হয় ব্রিটিশ-শাসিত ভারতবর্ষ। বর্তমান পাকিস্তানের লাহোরে একটি গণশিক্ষা কর্মসূচি পরিচালনা কিংবা পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কাজে যুক্ত হন তিনি। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কর্মকর্তাদের নীতি-নির্ধারণী বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেন, এবং উর্দু ভাষায় ইসলামের ইতিহাস নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেন।


তবে এই সবকিছুর পাশাপাশি, লেইটনার আকৃষ্ট হন আরেকটি বিষয়েও—আন্তঃসাংস্কৃতিক বোঝাপড়ার একটি সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে।


১৮৮১ সালে ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন লেইটনার। লক্ষ্য স্থির করেন, ইসলাম ধর্ম ও ইসলামি সংস্কৃতির ব্যাপারে সাধারণ মানুষের জ্ঞানবৃদ্ধির চেষ্টা করবেন। তাই তিনি পরিকল্পনা করেন, এমন একটি জ্ঞানকেন্দ্র গড়ে তুলবেন, যেখানে প্রাচ্যদেশীয় ভাষা ও ইতিহাস নিয়ে চর্চা করা হবে।

ব্রুকউডের খ্রিস্টান সেকশনে লেইটনারের কবর; Image Source: Andrew Shaylor

খুঁজতে খুঁজতে সারের ওকিংয়ে একটি মনমতো জায়গা পেয়ে যান তিনি। ১৮৬২ সালে ওকিং রেললাইনের পাশে নিও-গথিক শৈলীর একটি লাল ইটের দালান তৈরি করা হয়েছিল অবসরপ্রাপ্ত অভিনেতাদের জন্য। কিন্তু অনেক বছর ধরেই খালি পড়ে ছিল সেটি। তাই লেইটনার সেটিকে রূপান্তরিত করেন তার স্বপ্নের ওরিয়েন্টাল ইনস্টিটিউটে। দ্রুতই প্রতিষ্ঠানটি দারুণ সুনাম অর্জন করে বৃত্তি ব্যবস্থার কারণে। তাছাড়া এখান থেকে আরবি, ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় জার্নাল প্রকাশিত হতে থাকে, এবং ডিগ্রি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এসে ভর্তি হয় এই প্রতিষ্ঠানে।


১৮৯৯ সালের ২২ মার্চ লেইটনারের মৃত্যুর পর অবশ্য প্রতিষ্ঠানটি বেশিদিন টেকেনি। তহবিল ফুরিয়ে যাওয়ায় একসময় সেটি রূপান্তরিত হয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইউনিটে, এবং শত বছর পর সেখানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন রিটেইল স্টোর।

শাহজাহান মসজিদের ভেতরের চিত্র; Image Source:  Surrey Advertiser / Grahame Larter

তবে যেটি এখনো টিকে রয়েছে, তা হলো লেইটনারের নির্মাণ করে যাওয়া শাহজাহান মসজিদ। ১৮৮৯ সালে নির্মিত হয় মসজিদটি, যেন ওরিয়েন্টাল ইনস্টিটিউটের মুসলিম শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সেখানে নামাজ আদায় করতে পারেন। অবশ্য লেইটনারের পরিকল্পনা ছিল আরো সুদূরপ্রসারী। তিনি চেয়েছিলেন, তার আন্তঃধর্মীয় সংযোগ স্থাপনের অংশ হিসেবে মসজিদের পাশাপাশি একই জায়গায় খ্রিস্টানদের গীর্জা এবং হিন্দু ও ইহুদিদের মন্দিরও গড়ে তুলবেন। কিন্তু মৃত্যুর আগে কেবল মসজিদের কাজই সম্পন্ন করে যেতে পেরেছিলেন তিনি।

দ্য ওকিং মুসলিম ওয়ার সিমেট্রি - পিস গার্ডেন্স (১৯১৫); Image Source: Andrew Shaylor

যা-ই হোক, ওকিংয়ে শাহজাহান মসজিদ নির্মাণের আগেই, ১৮৮৭ সালে লিভারপুলে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন আব্দুল্লাহ কুইলিয়াম। তারপরও, একদিক থেকে শাহজাহান মসজিদ এগিয়ে। কেননা, শাহজাহান মসজিদই হলো ব্রিটেনের প্রথম মসজিদ, যেটির দালান শুরু থেকেই মসজিদ নির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে নির্মিত হয়। অন্যদিকে, লিভারপুলে মূলত ইতোমধ্যে বিদ্যমান একটি ভবনকে মসজিদে রূপ দিয়েছিলেন কুইলিয়াম।


শাহজাহান মসজিদের পরিকল্পনা করেন গিল্ডফোর্ডের এক খ্রিস্টান প্রকৌশলী, উইলিয়াম আইজ্যাক চেম্বার্স। মসজিদের ঘনাকৃতির খিলানের বহির্ভাগ অনেকটা ভারতীয় মুঘল শৈলী থেকে অনুপ্রাণিত। সাদা দেয়ালের উপর গম্বুজটা সবুজ। সব মিলিয়ে ব্রিটেনের প্রাক-বিংশ শতকের স্থাপত্যশৈলী হিসেবে মসজিদটির নকশা খুবই উঁচুদরের।

শাহজাহান মসজিদ; Image Source: Surrey Advertiser / Grahame Larter

মসজিদটি নির্মাণের জন্য লেইটনার অর্থ সাহায্য পেয়েছিলেন ভারতের ভোপাল রাজ্যের শাসক, সুলতানা শাহজাহান বেগমের কাছ থেকে। এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, কেন মসজিদটির নাম শাহজাহান মসজিদ!


১৮৯৯ সালে লেইটনারের মৃত্যুর পর শাহজাহান মসজিদের পরিণতিও প্রায় ওরিয়েন্টাল ইনস্টিটিউটের মতো হতে বসেছিল। ওরিয়েন্টাল ইনস্টিটিউট উঠে যাওয়ায়, এই মসজিদে নামাজ আদায়ের মতো যথেষ্ট লোকও ছিল না। অব্যবহারে, অনাদরে পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছিল মসজিদটি। তাই লেইটনারের ছেলে তো মসজিদটি বিক্রিই করে দিতে যাচ্ছিলেন।


শেষ রক্ষা হয় ১৯১৩ সালে পাঞ্জাব থেকে ব্রিটেনে আসা ভারতীয় আইনজীবী ও পণ্ডিত খাজা কামাল-উদ-দীনের বদৌলতে। তার কারণেই যেন অনেকটা নবজীবন লাভ করে এই "অমুসলিমের দেশের মসজিদ"। তৎকালীন প্রভাবশালী নাইট লর্ড হেডলিকে তিনি রাজি করান মসজিদটি টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে সাহায্য করতে। তাই সে যাত্রায় বেঁচে যায় মসজিদটি। এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত অনেকটা ধুঁকে ধুঁকে চললেও, এর কয়েক বছর পর স্বাধীন ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) থেকে অভিবাসীরা এসে ব্রিটেনে বসতি গড়ে তুললে, মসজিদটিরও প্রকৃত সদ্ব্যবহার শুরু হয়।

দ্য মোহামেডান সিমেট্রি; Image Source: Andrew Shaylor

শাহজাহান মসজিদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ব্রিটেনের প্রথম মুসলিম গোরস্থানের নামও। সেটি হলো দ্য মোহামেডান সিমেট্রি। ১৮৮৪ সালে ওরিয়েন্টাল ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি এটিও তৈরি করেন লেইটনার। মূলত ব্রুকউড সিমেট্রির (তৎকালীন ইউরোপের বৃহত্তম গোরস্থান, এবং এখনো যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম) একটি প্লট আলাদা করে রাখা হয় মুসলিমদের ব্যবহারের জন্য। কিন্তু সেখানে প্রথম দাফনকার্য সম্পন্ন হয় ১৮৯৫ সালে, যখন লন্ডন সফরকালে মৃত্যুবরণ করেন শেখ নুবি নামের এক ভারতীয় জাদুকর।


১৯১৫ সালে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলের মাঝে, শাহজাহান মসজিদের তৎকালীন ইমাম মৌলভী সদর-উদ-দীন আরেকটি গোরস্থানের জমি আদায় করেন ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে। এই গোরস্থানটি ছিল নির্দিষ্টভাবে কেবল যুদ্ধে শহীদ হওয়া মুসলিম সৈন্যদের জন্য। হরসেল কমনে অবস্থিত, ওকিং মুসলিম ওয়ার সিমেট্রি নামে পরিচিত গোরস্থানটিকেও সাজানো হয় মুঘল শৈলীতে, শাহজাহান মসজিদের সাথে মিল রেখে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সেখানে মোট ১৮ জনকে দাফন করা হয়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ ও ফ্রি ফ্রেঞ্চ বাহিনীর হয়ে যুদ্ধে করে শহীদ হওয়া মুসলিম সৈন্যদেরও এখানেই দাফন করা হয়।

ওকিং মুসলিম ওয়ার সিমেট্রি; Image Source: Andrew Shaylor

১৯৬৯ সালে কবরগুলোকে আকারে অপেক্ষাকৃত বড় ব্রুকউড মিলিটারি সিমেট্রিতে স্থানান্তর করা হয়, এবং ২০১৫ সালে জায়গাটি পুনরায় নামাঙ্কিত করা হয় মুসলিম ওয়ার সিমেট্রি পিস গার্ডেন হিসেবে।


শাহজাহান মসজিদ এবং গোরস্থানগুলো সবই এখন ব্রিটেন'স মুসলিম হেরিটেজ ট্রেইলসের অংশ, যার মাধ্যমে দর্শনার্থীরা ঘুরে ঘুরে দেখতে ও জানতে পারে ব্রিটেনে মুসলিম বসতি ও সভ্যতার ইতিহাস। বিশেষত ব্রিটেনের অভিবাসী মুসলিমদের জন্য এটি একটি দারুণ সুযোগ নিজেদের শিকড় সন্ধানের জন্য। 

------------------------------------------------------------------------------------------------------------

This article is in Bengali language. It describes the lifestory of Gottlieb Wilhelm Leitner and the fascinating history behind Surrey's Shah Jahan Mosque. Necessary references have been hyperlinked inside. 

Featured Image © Al Fozan












বৃহস্পতিবার, ২৭ মে, ২০২১

৫/২৭/২০২১ ০৩:১১:০০ PM

ওয়ারশ ঘেটো বিদ্রোহ: নাৎসিদের বিরুদ্ধে পোলিশ ইহুদিদের প্রতিরোধের গল্প


মধ্যযুগে পোল্যান্ড ছিল ইউরোপের সবচেয়ে স্বাধীন চিন্তা-চেতনা লালনকারী দেশগুলোর একটি। ইতিহাসের একটি লম্বা সময় ধরে পোলিশরা বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের আনন্দচিত্তে তাদের ভূমিতে স্বাগত জানিয়েছে, যাদের একটি বড় অংশ ছিল ইহুদি। এজন্য দেখা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে পোল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০% ছিল ইহুদি, ইউরোপের সব দেশের মধ্যে যা ছিল সবচেয়ে বেশি। ইউরোপের অনেক দেশের মতো সেখানে জীবিকার্জন কিংবা স্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষেত্রে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য না থাকায় ইহুদিরা শান্তিতেই বসবাস করে আসছিল শত শত বছর ধরে। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানরা যখন পোল্যান্ড আক্রমণ করে তখন।


জীবিকার্জন কিংবা নাগরিক অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে প্রতিটি রাজধানীতে একটু আলাদা সুবিধা থাকে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকে। যেমন বলা যায় শিক্ষা, চিকিৎসার কিংবা আয়ের উৎস তালাশের জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো জায়গা নিঃসন্দেহে রাজধানী ঢাকা। এজন্য দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি, অন্যান্য স্থান থেকে মানুষের আগমন বেশি। পোল্যান্ডের ক্ষেত্রেও বিষয়টি ঠিক একই ছিল। ইহুদিরা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে (বিশেষ করে ইউরোপ) আগমনের পর বসবাসের জন্য রাজধানী ওয়ারশকেই বেছে নিয়েছিল, কারণ নাগরিক সুবিধা ছিল এখানে বেশি।


রাজধানী ওয়ারশতে যুদ্ধ শুরুর সময় মোট অধিবাসী ছিল ১৩ লাখ, যেখানে ইহুদি অধিবাসী ছিল প্রায় ৪ লাখ! এজন্য যখন জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে, তখন ওয়ারশ শহরের বিপুল সংখ্যক ইহুদি যেন নাৎসিদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক কোনো কার্যক্রমে অংশ নিতে না পারে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছিল জার্মানরা।

পোল্যান্ডে বৈষম্য না থাকায় ইহুদিরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগপর্যন্ত শান্তিতেই বসবাস করছিল; image source: encyclopedia.ushhm.org

পোল্যান্ডে নাৎসিরা আক্রমণ করেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার একেবারে প্রথমদিকে, ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে। সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে চুক্তি থাকার কারণে প্রথমদিকে পুরো পোল্যান্ড জার্মান সৈন্যরা করায়ত্ত করতে পারেনি। কিন্তু পরবর্তীতে চুক্তিভঙ্গ করে ১৯৪১ সালে হিটলারের সৈন্যরা সোভিয়েত রাশিয়া আক্রমণ করলে চুক্তি অকার্যকর হয়ে যায়, পুরো পোল্যান্ড দখল করতে জার্মানির আর আইনগত কোনো বাধা ছিল না। দেশটি দখলের পর রাজধানী ওয়ারশর ইহুদিদের উপর নিপীড়ন শুরু হয়। তাদের নাগরিক অধিকার রদ করা হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে তাদের বিদায় করা হয়, প্রার্থনার স্থানগুলো হয় ধুলোয় মিশিয়ে দেয়া হয় নতুবা জেলখানায় পরিণত করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জাদুঘরে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।


একটি জাতি বা সম্প্রদায়কে একঘরে করে ফেলার, পিছিয়ে দেয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ন্যূনতম মানবিক অধিকারগুলো কেড়ে নেয়া, যেটি জার্মানরা পোল্যান্ড দখলের পর খুব সুচারুভাবে সম্পন্ন করে। এরপরের পদক্ষেপ হিসেবে তারা শহরের সমস্ত ইহুদি অধিবাসীদের একটি নির্দিষ্ট এলাকায় আটকে ফেলার পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং অল্প সময়ের মধ্যে তা বাস্তবায়নও করে। পোল্যান্ডের রাজধানীর ওয়ারশতেই বিভিন্ন এলাকা থেকে ইহুদিদের ধরে এনে ঘেটো (Ghetto) বা বস্তি-ঘরানার একটি এলাকায় তাদেরকে আটকে ফেলা হয়। এক বর্গমাইল এলাকায় অসংখ্য ছোট ছোট ঘর তৈরি করা হয়। এলাকাটি প্রায় দশ ফুট উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়, যাতে কোনো ইহুদি পালাতে না পারে। দেয়াদের উপর বাড়তি সতর্কতার জন্য আবার কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়, আর সশস্ত্র নাৎসি সৈন্যরা সবসময় পাহারা দিতে যাতে কেউ পালাতে না পারে।

বিশ্বযুদ্ধের প্রথমদিকেই নাৎসি বাহিনী পোল্যান্ডে আক্রমণ করে; image source: bbc.com

এবার ওয়ারশ শহরের সেই কুখ্যাত ঘেটো এলাকা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক। পুরো এলাকাতে খাবারের তীব্র অভাব দেখা দেয়। বাইরে থেকে ঘেটো এলাকায় ঠিক কতটুকু খাবার ঢুকবে– এটা নিয়ন্ত্রণ করত জার্মানরা। স্বভাবতই তারা প্রয়োজনের তুলনায় অতি অল্প খাবার রেশন আকারে এলাকার ইহুদিদের মাঝে বিতরণ করত। এ কারণে ক্ষুধার তাড়নায় একসময় ঘেটোর ইহুদিরা চোরাই পথ অবলম্বন করতে শুরু করে। বাইরের মানুষদের মাধ্যমে এবং জার্মান পাহারাদার সৈন্যদের ঘুষ (ঘুষ হিসেবে সাথে থাকা মূল্যবান জিনিস দিতে হতো) প্রদানের মাধ্যমে তারা বাইরে থেকে কিছু খাবার সংগ্রহ করতে পারতো, তবুও তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি অল্পই ছিল।


প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, প্রতিটি ঘরে গাদাগাদি করে ইহুদিদের থাকতে হতো। এক বর্গ মাইল এলাকায় যদি প্রায় চার লাখ মানুষকে রাখা হয়, তাহলে জনপ্রতি অতি অল্প জায়গা বরাদ্দ থাকাই স্বাভাবিক। ঘেটোর নোংরা পরিবেশে একসময় ছোঁয়াচে রোগ দেখা দেয় এবং প্রতিদিন শত শত মানুষ মারা যেতে শুরু করে। এদিকে পালানোরও কোনো উপায় ছিল না, কারণ যারা পালানোর চেষ্টা করেছিল তাদেরকে নাৎসি সশস্ত্র পাহারাদারদের হাতে গুলি খেয়ে মরতে হয়েছে।

কাঁটাতারে ঘেরা ঘেটো বা বস্তি এলাকায় ইহুদিদের আবদ্ধ করে ফেলা হয়; image source: time.com

যুদ্ধের সময় যত বাড়তে থাকে, নাৎসিদের আরও বেশি করে কর্মক্ষম জনশক্তির প্রয়োজন বাড়তে থাকে। এজন্য তারা একসময় প্রচার করতে শুরু করে যে, ওয়ারশর ঘেটোস্থ ইহুদিদের লেবার ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হবে। আসলে এটি ছিল একটি মিথ্যা কথা। জার্মান প্রশাসন 'গ্রেট অ্যাকশন প্ল্যান' হাতে নেয়, যেখানে ইহুদিদের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে তাদের উপর গণহত্যার গোপন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওয়ারশর ঘেটো এলাকা থেকে ইহুদিদের ত্রেব্লিংকা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৪২ সালের জুলাই মাসের মধ্যেই প্রায় দুই লাখ ষাট হাজার ইহুদিকে সেই ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়।


পঞ্চান্ন থেকে ষাট হাজার ইহুদি ওয়ারশতে থেকে গিয়েছিল এবং তারা জানতে পেরেছিল যে ত্রেব্লিংকা ক্যাম্পে ইহুদিদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল মূলত গণহত্যার জন্য। তারা এটাও জানতো যে কিছু দিন পর তাদেরকেও সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে, তাদের উপরেও গণহত্যা চালানো হবে। এজন্য তারা শেষ চেষ্টা হিসেবে ওয়ারশ শহরের সেই ঘেটো এলাকাতেই গোপনে সশস্ত্র নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে (যেমন: জিউয়িশ কমব্যাট অ্যাসোসিয়েশন বা ZOB)। ঘেটো এলাকার বাইরে পোলিশ সৈন্য, যারা নাৎসিদের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রেখেছিল, তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে ইহুদিরা হালকা অস্ত্রও যোগাড় করে। তবে নাৎসিদের পূর্ণমাত্রায় প্রতিরোধ করার জন্য তা যথেষ্ট ছিল না, এ কথা বলাই বাহুল্য।


১৯৪৩ সালের জানুয়ারি মাসে বিদ্রোহের প্রথম স্ফুলিঙ্গ জ্বলে ওঠে। জানুয়ারির ১৮ তারিখে কিছু ইহুদিকে ত্রেব্লিংকা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার জন্য একদল নাৎসি সৈন্য ঘেটো এলাকায় প্রবেশ করে। লাইনে দাঁড় করানোর একপর্যায়ে ইহুদিরা লুকিয়ে রাখা অস্ত্র দিয়ে নাৎসি সৈন্যদের উপর আক্রমণ চালায় এবং সাময়িকভাবে সফল হয়। নাৎসি সৈন্যরা পিছু হটতে বাধ্য হয়, কিন্তু পরবর্তীতে কয়েক মাস ঘেটো এলাকা থেকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বন্দিদের জোরপূর্বক নেয়া বন্ধ ছিল।

বিদ্রোহী ইহুদিদের গ্রেফতার করে নির্বিচারে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়; image source: history.com

এপ্রিল মাসে ভারি অস্ত্রশস্ত্রসহ জার্মান সৈন্যরা আক্রমণ চালায় ঘেটো এলাকায়। প্রথমে তারা শান্তিপূর্ণ আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায়। কিন্তু ইহুদিরা তাদের সীমিত অস্ত্রসহ লড়াই চালিয়ে যায়। প্রায় এক মাস ধরে সংঘর্ষ চলে। জার্মানরা একের পর এক ঘর এবং বাংকার জ্বালিয়ে দেয়। ১৯ এপ্রিল থেকে ১৬ মে– প্রায় এক মাস ধরে চলা এই বিদ্রোহে প্রায় সাত হাজার ইহুদি মারা যায়, যাদের বেশিরভাগের মৃত্যু হয় আগুনে পুড়ে। বাকি ইহুদিরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। বিদ্রোহী ইহুদিদের মধ্যে অনেকে পালানোর চেষ্টা করে সফলও হয়, কিন্তু পরবর্তীতে নাৎসি সৈন্যরা তাদের অনেককে পুনরায় গ্রেফতার করে এবং ফাঁসিতে ঝোলায়। আত্মসমর্পণকৃত ইহুদিদের প্রায় সবাইকেই কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয়।


This Bengali article discusses the Warsaw ghetto uprising in details.

Reference:

১) Warsaw Ghetto Uprising - History

২) Warsaw Ghetto Uprising - Yad Vashem

৩) Warsaw Ghetto - THE

৪) The Warsaw Ghetto Uprising - Facing History

বুধবার, ২৬ মে, ২০২১

৫/২৬/২০২১ ০৯:০২:০০ PM

ব্ল্যাক, হোয়াইট ও ইয়েলো ফাঙ্গাসের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?


ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কিছুটা কমতে শুরু করলেও দেশটিতে কোভিড থেকে সেরে ওঠাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ফাঙ্গাস জনিত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ বাড়ছে।


এর আগে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ও হোয়াইট ফাঙ্গাসের সংক্রমণের খবর পাওয়া গেলেও সোমবার প্রথম কোনো রোগীর মধ্যে ইয়েলো বা হলুদ ফাঙ্গাস সংক্রমণের খবর পাওয়া যাওয়ার পর মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।


উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদের হার্ষ ইএনটি হাসপাতালে একজন রোগীর মধ্যে তিন ধরনের - কালো, সাদা ও হলুদ ফাঙ্গাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।


হার্ষ ইএনটি হাসপাতালের প্রধান ডা. বিপিএস ত্যাগীর মতে এটি অত্যন্ত বিরল একটি ঘটনা। ৫৯ বছর বয়সী একজন রোগীর দেহে হলুদ ফাঙ্গাসের, চিকিৎসা পরিভাষায় যার নাম ''মিউকর সেপটিকাস'', উপস্থিতি পান তিনি।


"এই ফাঙ্গাস সাধারণত সরীসৃপদের মধ্যে পাওয়া যায়। অন্য চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে যতদূর জানতে পেরেছি, এই প্রথম এই ধরনের কোনো রোগী পাওয়া গেল। ঐ একই রোগীর দেহে কালো ও সাদা ফাঙ্গাসের উপস্থিতিও পাওয়া গেছে।"


মিউকোরমাইকোসিস: প্রাণঘাতী 'ব্ল্যাক ফাঙ্গাস' সংক্রমণ


যেই ব্যক্তির দেহে তিন ধরনের ফাঙ্গাস সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গেছে, সঞ্জয় নগরের অধিবাসী ঐ ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও তার অক্সিজেন প্রয়োজন হয়নি।


তবে ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে তাকে স্টেরয়েড দেয়া হয়েছিল। ঐ ব্যক্তির ডায়াবেটিসও ছিল।


ডা. ত্যাগীর ভাষ্য অনুযায়ী, "ঐ রোগী ৮-১০ দিন যাবত অসুস্থ ছিলেন। তার সামান্য জ্বর, ক্ষুধামন্দার পাশাপাশি নাক দিয়ে কালো-লাল তরল নির্গত হচ্ছিল এবং নাকের আশেপাশে কিছুটা ব্যথা ছিল।"


"তার এন্ডোস্কপিতে ফাঙ্গাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। এর পরপরই তার অস্ত্রোপচার করা হয়।"


"এই ফাঙ্গাস জনিত সংক্রমণকে এক ধরনের মিউকরমাইকোসিস হিসেবে চিহ্নিত করা যায়", বলেন ডা. ত্যাগী।


ফাঙ্গাসের রং কি গুরুত্বপূর্ণ?


ভারতে এর আগে কালো ও সাদা বর্ণের ফাঙ্গাস সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে।


প্রথমদিকে গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। পরবর্তীতে কর্নাটক, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থানেও এই ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ঘটে।


অনেক হাসপাতালে মিউকোরমাইকোসিসে আক্রান্তদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড তৈরি করা হয়।


এর কিছুদিন পর বিহারে চার জন হোয়াইট বা সাদা ফাঙ্গাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর উত্তর প্রদেশেও একই ধরনেরর কিছু রোগী পাওয়া যায়।


মানুষের মধ্যে এই তিন ধরণের ফাঙ্গাস সম্পর্কে আতঙ্ক রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন আতঙ্কিত না হয়ে মানুষের এই ফাঙ্গাস সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা উচিত।


দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের পরিচালক রনদীপ গুলেরিয়া সম্প্রতি ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত একটি সংবাদ সম্মেলনে এই ফাঙ্গাসগুলো নিয়ে একটি ধারণা দিয়েছিলেন।


তিনি বলেন, "ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বোঝাতে কালো, সাদা, হলুদ বিভিন্ন নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে এটি সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ফাঙ্গাসটি একেক অঙ্গে একেক রকম রঙয়ের হয়ে প্রতীয়মান হতে পারে, কিন্তু এটি আসলে একই জাতের ফাঙ্গাস।"


"যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের এই ফাঙ্গাসের দ্বারা সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি।"


ডা গুলেরিয়া জানান, "সাধারণত তিন ধরণের ফাঙ্গাসের সংক্রমণ দেখতে পাই আমরা - মিউকরমাইকোসিস, ক্যানডিডা অথবা অ্যাসপারগিলাস ফাঙ্গাস সংক্রমণ।"


"সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় মিউকোরমাইকোসিস । এটি পরিবেশেই অবস্থান করে এবং এটি সংক্রামক নয়। যেসব রোগীর কোভিড চিকিৎসার সময় স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়েছে বা যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের এই ফাঙ্গাসের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।"


গুরুগ্রামের ফর্টিস মেমোরিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান পরিচালক ডাক্তার রাহুল ভার্গবও মনে করেন আলাদা আলাদা রং থাকলেও ফাঙ্গাসগুলো একই ধরনের।


ডা ভার্গব বলেন, "ফাঙ্গাসের ভেতরে কোনো রং নেই। এই ফাঙ্গাসটি যখন নাক ও মুখ থেকে সংগ্রহ করে মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে দেখা হয়, তখন এর মধ্যে মৃত কোষ দেখা গেছে। 'মিউকর' গ্রুপের ফাঙ্গাস 'রাইজোপাস' শরীরের কোষ মেরে ফেলে এবং মৃত কোষগুলোর কালো একটি দাগ রেখে যায়।"


"সেই থেকে রাইজোপাস ফাঙ্গাসকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এটি এক ধরণের মিউকোরমাইকোসিস ।"


অন্য দু'টি ফাঙ্গাস সম্পর্কে ডা ভার্গব বলেন, "শরীরে ক্যানডিডা দেখতে অনেকটা দই'য়ের মত দেখায়। তাই এর নাম সাদা ফাঙ্গাস।"


"তৃতীয় এক ধরনের ফাঙ্গাসের নাম অ্যাসপারগিলাস। এটি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এটি শরীরে কালো, নীলচে সবুজ, হলদেটে সবুজ এবং খয়েরি রংয়ে দেখা যায়। বাইরে থেকে কোন রঙয়ের দেখতে, সেই অনুযায়ী এই ফাঙ্গাসের নাম দেয়ার প্রবণতা দেখা গেলেও এর প্রজাতি নির্ণয় করা না গেলে এটির সঠিক চিকিৎসা করা সম্ভব নয়।"


ফাঙ্গাস সংক্রমণের কারণ কী?


প্রত্যেকটি ফাঙ্গাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ বিষয় ছিল - যাদের ফাঙ্গাস সংক্রমণ হয়েছে তাদের প্রত্যেকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল ছিল।


চিকিৎসকরা বলছেন, সুস্থ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষের এই ফাঙ্গাস সংক্রমণ হয় না। ফাঙ্গাসটি পরিবেশে অবস্থান করলেও খুব কম ক্ষেত্রেই সংক্রমণের ঘটনা ঘটে।


কারা ফাঙ্গাস সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে থাকতে পারেন, সেসম্পর্কে দিল্লির ম্যাক্স হাসপাতালের ইন্টার্নাল মেডিসিন বিভাগের পরিচালক ডা. রোমেল টিক্কু বলছেন: 


বর্তমানে ফাঙ্গাসের সংক্রমণের হার বেশি হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বৃদ্ধি। সবচেয়ে বেশি মিউকোরমাইকোসিস পাওয়া গেছে কোভিড রোগীদের মধ্যেই।

যাদের ডায়াবেটিস আছে এবং যাদের চিকিৎসার জন্য স্টেরয়েড দেয়া হয়েছে, তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তবে ডায়াবেটিস না থাকলেও যাদের স্টেরয়েড দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে এই ধরণের সংক্রমণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি।

যেসব রোগীদের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, তাদের মধ্যেও ফাঙ্গাস সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। পাশাপাশি, কেমোথেরাপি নিতে থাকা বা ডায়ালাইসিস চলতে থাকা রোগীদের মধ্যেও এই সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।

করোনাভাইরাস রোগীদের ফুসফুসের প্রদাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়।


পাশাপাশি করোনাভাইরাস প্রতিহত করতে শরীরের ইমিউন সিস্টেম যখন অতিরিক্ত মাত্রায় কাজ করতে থাকে, তখন স্টেরয়েড শরীরের ক্ষয় রোধ করার কাজ করে।


স্টেরয়েড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কিছুটা দুর্বল করে রোগীদের দেহে শর্করার মাত্রা বাড়ায়, যার ফলে ফাঙ্গাসের সংক্রমণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।


শরীরে ফাঙ্গাসের সংক্রমণের বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে। চিকিৎসার সুবিধার্থে সময়মতো এই ফাঙ্গাস শনাক্ত করা জরুরি।


কয়েকজন চিকিৎসকের সাথে কথা বলে ফাঙ্গাস সংক্রমণের বর্তমান উপসর্গগুলো সম্পর্কে জানা যায়।


মিউকোরমাইকোসিস, অর্থাৎ 'ব্ল্যাক ফাঙ্গাস'


মিউকোর বা রাইজোপাস ফাঙ্গাসের মাধ্যমে এই সংক্রমণ হয়ে থাকে। এই ফাঙ্গাস সাধারণত মাটি, গাছ, সার, পচা ফল এবং সবজিতে পাওয়া যায়।


এই ফাঙ্গাস সাইনাস, মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে প্রভাব ফেলে। কয়েকটি ক্ষেত্রে এই ফাঙ্গাসের কারণে পরিপাকতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।


এই ধরণের সংক্রমণের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে চোখ বা চোয়াল অপসারণেরও প্রয়োজন হতে পারে।


চিকিৎসকদের মতে, এই ফাঙ্গাস ফুসফুস বা পরিপাকতন্ত্র আক্রমণ করলে তা শনাক্ত করা কঠিন, কারণ তখন উপসর্গগুলো দেরিতে প্রকাশিত হয়।


মিউকোরমাইকোসিসে মৃত্যুহার প্রায় ৫০ শতাংশ।


এর উপসর্গগুলো হলো: নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে রক্ত বা কালো তরল নির্গত হওয়া, মাথা ব্যথা, চোখ ফুলে যাওয়া বা ব্যথা, চোখের পাতা খসে পড়া, চোখে ঝাপসা দেখা এবং শেষ পর্যন্ত অন্ধত্ব।


এছাড়া নাকের আশেপাশে কালো ছোট দাগ দেখা যেতে পারে এবং নাকের চারপাশে অসাড়তা তৈরি হতে পারে।


ফুসফুসে সংক্রমণের ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দিতে পারে।


মিউকোর সেপটিকাস


এটিও এক ধরণের মিউকোরমাইকোসিস। এর উপসর্গের মধ্যে রয়েছে জ্বর, নাক দিয়ে লাল বা কালো তরল নির্গত হওয়া, দুর্বলতা ও নাকের আশেপাশে অসাড়তা।


'ক্যানডিডা' বা হোয়াইট ফাঙ্গাস


যেসব রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং যাদের দীর্ঘসময় আইসিইউতে থাকতে হয়েছে, তাদের মধ্যে এই ধরনের ফাঙ্গাস সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি।


এই ধরনের সংক্রমণের ক্ষেত্রে জিহ্বায় সাদা ছোপ দেখা যায়। এই সংক্রমণ যকৃত ও ফুসফুসে হয়ে থাকে। এটি মিউকোরমাইকোসিসের মত ভয়াবহ নয়।


এই সংক্রমণে মৃত্যুর হার শতকরা প্রায় ১০ ভাগের মত।


সংক্রমণ রক্তে ছড়িয়ে গেলে এই ধরনের সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।


অ্যাসপারগিলাস সংক্রমণ


করোনাভাইরাস রোগীদের মধ্যে এই ধরনের ফাঙ্গাসের সংক্রমণও দেখা গেছে। তবে এরকম ঘটনা এখন পর্যন্ত খুবই বিরল। এর ফলে ফুসফুসে গহ্বর তৈরি হতে পারে।


এই সংক্রমণের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া হলে সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।


যেভাবে নিজেকে সুস্থ রাখবেন 


এই ধরনের ফাঙ্গাস জনিত সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা খুবই জরুরি বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।


করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়ার পর রোগীদের ধুলাবালির কাছে যাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।


অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের পরিচালক ডা, রনদীপ গুলেরিয়া বলেন হাত ধোয়া, অক্সিজেন টিউব পরিষ্কার রাখা, অক্সিজেন সাপোর্টের জন্য ব্যবহৃত পানি জীবাণুমুক্ত করার দিকে নজর দেয়া খুবই জরুরি।


যেসব রোগীদের করোনাভাইরাসের চিকিৎসা চলমান রয়েছে, তাদের অনেকে সুস্থ হয়ে গেলেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে। এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।


বর্তমানে ভারতে নয় হাজারের বেশি মিউকোরমাইকোসিস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে, তবে ক্যানডিডা ও অ্যাসপারগিলাসের রোগী অনেক এখনও অনেক কম।

ছবি ও তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা

সোমবার, ২৪ মে, ২০২১

৫/২৪/২০২১ ০৭:৪১:০০ PM

১৪০০ বছর ধরে রক্ষিত খ্রিস্টান সন্ন্যাসীদের প্রতি নবীজির অঙ্গীকারনামা

 


৬২৮ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট ক্যাথরিন গির্জার একজন প্রতিনিধি মহানবী (সা.) এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সুরক্ষা প্রদানের অনুরোধ করেন। মহানবী (সা.) ওই প্রতিনিধিকে তার সম্প্রদায়ের বিশেষাধিকারের সংবলিত একটি অঙ্গীকারনামা প্রদান করেন। সেন্ট ক্যাথরিন গির্জা মিসরের সিনাই উপত্যকার পাদদেশে অবস্থিত। বেশ পুরনো হওয়ায় এটি এখন বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষিত স্থান।


সেন্ট ক্যাথরিন গির্জায় প্রায় ১৪০০ বছর ধরে ধরে রক্ষিত আছে বহু প্রাচীন দলিল ও নথিপত্র। ধারণা করা হয়, ভ্যাটিকানের পর সেন্ট ক্যাথরিন প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণের জন্য বিখ্যাত। সেখানেই আছে ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে লেখা সন্ন্যাসীদের উদ্দেশে লেখা মহানবী (সা.)-এর একটি চিঠির অনুলিপি। ঐতিহাসিক ওই অঙ্গীকারনামায় মহানবী (সা.) খ্রিস্টানদের বিশেষাধিকারের সনদ প্রদান করেছেন এবং মুসলিম সমাজে বসবাসকারী খ্রিস্টানদের নিরাপত্তা প্রদানের নির্দেশনা দিয়েছেন। ঐতিহাসিক সেই অঙ্গীকারনামার অনুবাদ নিচে তুলে ধরা হলো-


‘এটি মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহর পক্ষ থেকে বার্তা তাদের প্রতি, যারা চুক্তির অংশ হিসেবে খ্রিস্টবাদ ধারণ করে; তারা কাছের হোক বা দূরের আমরা তাদের সঙ্গে আছি। প্রকৃতপক্ষে আমি, দাসরা, সাহায্যকারী ও আমার অনুসারীরা তাদের রক্ষা করবে। কেননা খ্রিস্টানরা আমার নাগরিক। আল্লাহর কসম! আমি এমন সব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে, যা তারা অপছন্দ করে। তাদের ওপর বিশেষ কোনো বিধি-নিষেধ থাকবে না। তাদের বিচারকদের চাকরিচ্যুত করা হবে না এবং তাদের সন্ন্যাসীদের গির্জাগুলো থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে না।


কেউ তাদের ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস করবে না, ক্ষতিগ্রস্ত করবে না অথবা মুসলিমদের জন্য তা থেকে কোনো কিছু ছিনিয়ে আনবে না। কেউ এমনটি করলে সে আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করল এবং তার নবীর অবাধ্য হলো। নিশ্চয়ই তারা আমার মিত্র এবং তারা যেসব বিষয় ঘৃণা করে আমি তার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা সনদ দিচ্ছি। কেউ তাদের ভ্রমণে বা যুদ্ধে অংশগ্রহণে বাধ্য করবে না; বরং মুসলিমরা তাদের জন্য যুদ্ধ করবে। কোনো খ্রিস্টান নারীর অনুমতি ছাড়া কোনো মুসলিম তাকে বিয়ে করতে পারবে না। (বিয়ের পর) প্রার্থনার জন্য তাকে চার্চে যেতে বাধা দেওয়া যাবে না। খ্রিস্টানদের চার্চের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হবে। কেউ চার্চ সংস্কার বা তার পবিত্রতা রক্ষায় বাধা দেবে না। কোনো মুসলিম কিয়ামত পর্যন্ত এই অঙ্গীকারনামার অবাধ্য হবে না।’


সূত্র: খালিজ টাইমস

রবিবার, ২৩ মে, ২০২১

৫/২৩/২০২১ ০৭:০৯:০০ PM

১০টি অদ্ভুত গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড

 


মানুষ বড়ই অদ্ভুত। অদ্ভুত তাদের শখ, তাদের চাওয়া পাওয়া। মানুষের চেয়েও বেশি অদ্ভুত প্রকৃতি। তাই কখনো প্রকৃতির খেয়ালে অথবা কখনো মানুষের অদ্ভুত শখের কারণে ব্যতিক্রমী সব ঘটনার জন্ম হয়। আর এ সমস্ত ঘটনা এতটাই ব্যতিক্রম যে দ্বিতীয় কোনো মানুষের পক্ষে সে ঘটনা দ্বিতীয়বার জন্ম দেওয়া বা চেষ্টা করার সাহস হয় না। ফলে এগুলো রেকর্ড হয়ে অক্ষুণ্ণ থাকে বছরের পর বছর। ঠাঁই পায় গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে। চলুন ডিজিটাল স্পাইয়ের সৌজন্যে জেনে নিই এমন ১০টি অদ্ভুত ওয়ার্ল্ড রেকর্ড সম্পর্কে।  


১. সবচেয়ে বড় চোখের পাপড়ি 

সৌন্দর্যবর্ধনে অনেকেই নকল চোখের পাপড়ি ব্যবহার করে থাকে। তবে চীনের জিয়ানজিয়ার চোখে নকল পাপড়ি পড়ার কোনো দরকার নেই। কারণ এই চোখের পাপড়ি দিয়েই গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়েছেন তিনি। তাঁর চোখের উপরের পাতার চোখের পাপড়ির দৈর্ঘ্য মাপা হয়েছে ১২.৪ সেন্টিমিটার।



২. সবচেয়ে বৃদ্ধ বডিবিল্ডার

শরীরকে ভালো রাখতে ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে ব্যায়াম করতে অনেকেই লজ্জা পায়। তাদের লজ্জা ভেঙেচুরে দিয়েছেন জিম আরিংটন। বৃদ্ধ বয়সেই ব্যায়াম শুরু করেছেন তিনি। শুধু তাই নয় ৮৫ বছর ৬ দিন বয়সে পেশাদর বডি বিল্ডার বনে রেকর্ড বুকে নিজের নাম লিখিয়েছেন তিনি।



৩. সবচেয়ে বড় নখের অধিকারিণী

অনেক নারীই নানা রঙের নেইলপলিশে নিজেদের নখ রাঙাতে ভালোবাসেন। কিন্তু ৬০ বছর বয়সী আয়ান্না উইলিয়ামসের মতো বড় নখ হলে নেলপলিশে সে নখ রাঙানোর জন্য যে খরচ পড়বে তা হয়তো আপনার পক্ষে মেনে কষ্টকর হতে পারে। কারণ উইলিয়ামসের নখের দৈর্ঘ্য মাপা হয়েছে ৫.৭৬ মিটার। আগে এই রেকর্ডের অধিকারী ছিলেন লি রেমন্ড। তাঁকে সরিয়ে রেকর্ডটি নিজের করে নিয়েছেন উইলিয়ামস।


৪. সবচেয়ে বড় টপ ফেড চুল

চুলে জেল দিয়ে অনেকেই তা খাড়া করে রাখতে পছন্দ করেন। কিন্তু সবার খাড়া চুলই মাথা নোয়াবে বেন্নে হারলেমেসের চুলের কাছে। তাঁর খাড়া চুলের দৈর্ঘ্য মাপা হয়েছে ৫২ সেন্টিমিটার। আর বাইরে বের হতে গেলে তাঁর এই চুল ঠিক করতে সময় লাগে পাক্কা দুই ঘণ্টা।



৫. সবচেয়ে বড় পা

আপনি যে প্যান্টই কিনে দেন না কেন একাতারিনা লিসিনাসের তা ছোট হবে। কারণ গিনেস ওয়ার্ল্ডের রেকর্ড অনুসারে তিনিই পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় পায়ের অধিকারী। তাঁর পায়ের দৈর্ঘ্য মাপা হয়েছে ৫২ ইঞ্চি (১৩২ সেন্টিমিটার)। অর্থাৎ শুধু তাঁর পায়ের দৈর্ঘ্যই প্রায় চার ফিটের মতো।



৬. মারমাইটখেকো

মারমাইট হলো ব্রিটিশদের প্রিয় খাবার। তরল জাতীয় এই পদার্থটি পাউরুটির সঙ্গে খেতে অনেকেই ভালোবাসেন। কিন্তু একসঙ্গে কতটুকু মারমাইট খেতে পারবেন আপনি? যা পারবেন তাঁর চেয়েও বেশি মারমাইট খেতে পারেন আন্দ্রে ওরটলফ। বর্তমানে এক মিনিটে সবচেয়ে বেশি মারমাইট খাওয়ার বিশ্বরেকর্ডটি তাঁর দখলে।



৭. এক ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বেলুন ফুলানোর অধিকারী

ধরুন আপনার বাসায় কোন পার্টি বা জন্মদিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। ঘর সাজানোর জন্য প্রচুর বেলুন ফুলানোর দরকার। তাহলে আপনি ভাড়া করতে পারেন হান্টার এওউইনকে। তিনি এক ঘণ্টায় প্রায় ৯১০টি বেলুন ফুলিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন। তাই তিনি হতে পারেন এ কাজের জন্য সবচেয়ে যোগ্য লোক।



৮. সবচেয়ে বড় লেজের বিড়াল

শিকারি বিড়ালকে গোফ দিয়ে চেনা গেলেও সিলভার মাইনে কুনের বিড়াল সাইগনুসকে চেনা যায় তার লেজ দিয়ে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লেজের অধিকারী এই বিড়াল। বিড়ালটির লেজের দৈর্ঘ্য মাপা হয়েছে ৪৪.৬৬ সেন্টিমিটার।



৯. সবচেয়ে দীর্ঘ গৃহপালিত বিড়াল

আগের বিড়ালটি লেজের দিক দিয়ে বড় হলেও এই বিড়ালটি বড় আকৃতিতে। আর্কটুরাস অ্যালদেবারান পাওয়ারস নামের এই বিড়ালটির দৈর্ঘ্য মাপা হয় ৪৮.৪ সেন্টিমিটার। পৃথিবীর সব গৃহপালিত বিড়ালদের মধ্যে তাঁর দৈর্ঘ্যই সবচেয়ে বেশি। ২০১৬ সালে তাঁর গড়া এই রেকর্ডটি এখনো অক্ষুণ্ণ রয়েছে।



১০. সবচেয়ে বেশি টেডি বিয়ারের সংগ্রহ

আপনার সন্তান কি প্রায়ই টেডি বিয়ারের জন্য মন খারাপ করে? তাহলে তাঁকে নিয়ে যেতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ডেকোটার জ্যাকি মিলের কাছে। কারণ তাঁর কাছে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রায় আট হাজার ২৫টি টেডি বিয়ার। সর্বপ্রথম টেডি বিয়ার গ্র্যান্ডমা জ্যাকি দিয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর এই টেডি বিয়ার সংগ্রহ। ২০০০ সালে গড়া এই রেকর্ডটি এখনো অক্ষুণ্ণ রয়েছে।
৫/২৩/২০২১ ০৬:৫৩:০০ PM

একাই হত্যা করেছেন ৭ হাজার মানুষকে!

 পৃথিবীতে এমন কিছু ঘটনা আছে যা শুনলে আপনার গায়ে কাঁটা দিতে বাধ্য। তেমনি এক হাড়কাঁপানো ঘটনা ঘটিয়েছেন একজন রাশিয়ান অফিসার। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ভ্যাসিলি ব্লকিন নামের ওই রাশিয়ান অফিসার একাই হত্যা করেন ৭ হাজার মানুষ। তবে এ হত্যাযজ্ঞ অবশ্য একদিনে করেননি, তার সময় লেগেছিল ২৮ দিন। এটিই একক কোনো মানুষের পক্ষে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক হত্যার রেকর্ড।

 

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, ১৮৮৫ সালে এক রাশিয়ান সম্ভ্রান্ত পরিবারে ব্লকিনের জন্ম। তার শৈশবের তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ভ্যাসিলি ব্লকিন নামের এ অফিসার মূলত ১৯১২ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকেই এমন কর্মে লিপ্ত হন। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এসে মানুষ হত্যার সেই ঘৃণ্য নেশা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। 


জানা গেছে, ভ্যাসিলি ব্লকিন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগেই তার নরপিশাচ রূপ দেখাতে শুরু করেন। তখনই তিনি ‘জারিস্ট আর্মিতে' যোগ দেন। তার এ খুনে মেজাজের জন্য তার নাম হয়ে যায় ‘ব্ল্যাক ওয়ার্ক’। লৌহমানবখ্যাত নিষ্ঠুর শাসক জোসেফ স্টালিনই মূলত তাকে দিয়ে এসব নৃশংসতা করাত। 



ভ্যাসিলি ব্লকিন একে একে রাশিয়ান সিক্রেট পুলিশ এনকেভিডির সব উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের হত্যা করে নিজেই ওই বাহিনীর প্রধান হন। পরে স্টালিনের নেতৃত্বে তিনি বেশ কিছু রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডেও অংশ নেন।


১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে জার্মানি রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ড দখল করে। তখন রাশিয়া যুদ্ধে যোগ না দিলেও পিশাচ ভ্যাসিলি ব্লকিনের নেতৃত্বে রুশ সৈন্যরা পোল্যান্ড বর্ডারে প্রবেশ করে। এরপর সেখানে দেশটির ২০ হাজার সৈন্য গ্রেফতার করে।


গ্রেফতারের পরই ভ্যাসিলি ব্লকিন তার আসল রূপ দেখাতে শুরু করেন। শুরু হয় ইতিহাসের অন্যতম ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞ; যার নাম দেয়া হয় ‘ক্যাটিন ম্যাসাকার’। জোসেফ স্টালিন ১৯৩৯ সালের ৫ মার্চ, গ্রেফতারকৃত পোলিশ সৈন্যদের মধ্যে শুধুমাত্র অফিসারদের হত্যার নির্দেশ দেয় ব্লকিনকে।


স্টালিনের নির্দেশের পর ১৯৩৯ সালের ৫ মার্চ থেকে পরের ২৮ দিনে ভ্যাসিলি ব্লকিন নিজেই হত্যা করে বন্দি থাকা ৭ হাজার পোলিশ অফিসারকে। এ হত্যাকাণ্ড চালাতে ব্লকিন একটি সাউন্ডপ্রুফ রুম তৈরি করেন। এরপর সেখানে প্রত্যেক রাতেই প্রায় ৩ শতাধিক পোলিশ অফিসারকে ডেকে নিয়ে হত্যা করতেন। হত্যার পর সেই মরদেহগুলো কোনো ধরনের সৎকার ছাড়াই গর্তে ফেলে দেওয়া হয়। 


হত্যাযজ্ঞে ব্লকিন সবসময় ৭ দশমিক ৬৫ এমএম-এর ওয়াল্টার পিপিকে পিস্তল ব্যবহার করতেন। কেননা এ পিস্তলে ঝাঁকি হতো অনেক কম আর মিসফায়ার হওয়ার চান্সও ছিল কম। ১৯৪৩ সালে রুশ জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দিলে পোলিশ সৈন্যদের মুক্তি দেয়া হয়। তবে পোলিশ অফিসারদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। যুদ্ধ শেষে স্টালিন ভ্যাসিলি ব্লকিনকে রুশ সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদক ভ্যালর অব অনার প্রদান করেন। নিষ্ঠুর শাসক স্টালিনের মৃত্যুর পর ১৯৫৫ সালে রহস্যজনকভাবে ইতিহাসের ঘৃণ্যতম হত্যাকারী ভ্যাসিলি ব্লকিনের মৃত্যু হয়।

বৃহস্পতিবার, ২০ মে, ২০২১

৫/২০/২০২১ ০৩:০১:০০ PM

হাত ও জিহ্বার স্পর্শেই বাতি জ্বালান তিনি

 


একজন মানুষের হাতের স্পর্শেই জ্বলে ওঠে বাতি। বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স পণ্য তার শরীরের স্পর্শেই চালু হয়ে যায়। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, যেখানে মানুষ বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুবরণ করেন; সেখানে এই ব্যক্তির শরীর সহ্য করে নেয় ১১ হাজার ভোল্টেজও।

বলছি, উত্তর ভারতের হরিয়ানের সোনীপটের বাসিন্দা দীপক জাংরার কথা। বর্তমানে তার বয়স ২২ বছর। খালি হাতে এমনকি জিহ্বা দিয়েও দীপক বাতি জ্বালাতে পারেন। তার এই প্রতিভা বিশ্বে বিরল। দীপক তার এই প্রতিভার বিষয়ে টের পান ১৬ বছর বয়সে। একদিন সে তার বাড়িতে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি মেরামত করার সময় শরীরের বিদ্যুৎ-প্রতিরোধ ক্ষমতা টের পান।




বাড়ির একটি ভাঙা হিটার মেরামত করতে গিয়ে দীপক ভুল করে একটি লাইভ তারকে স্পর্শ করেছিলেন। তবে তিনি অবাক হয়ে যান! কীভাবে এমনটি সম্ভব। তার তো শরীরে কোনো শক লাগেনি! এরপর দীপক তারটি ভালোভাবে পরীক্ষা করেন, দেখেন সত্যিই তারটি সচল এবং বিদ্যুত প্রবাহ হচ্ছে। পরবর্তীতে দীপক বিষয়টি পরীক্ষা করতে, বারবার সচল তার স্পর্শ করেন। দেখেন তার শরীরে বিদ্যুৎ কোনো প্রভাব ফেলছে না।

এরপর দীপক তার পরিবারকে সঙ্গে বিষয়টি জানান। তারাও অবাক হয়ে দীপকের এই অদ্ভূত শক্তি দেখেন। এ বিষয়ে দীপক বলেন, সৃষ্টিকর্তার প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ। তার কাছ থেকে অনেক মূল্যবান আশির্বাদ পেয়েছি আমি, যা অন্য কারও হাতে নেই।’ দীপকের জিহ্বা ১১ হাজার ভোল্টও সহ্য করতে পারে।


দীপক তার এই অসামান্য প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে এখন দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ান হয়ে উঠেছেন। দীপক জানান, আমি কোনো প্লাস বা অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ছাড়াই খালি হাতে কাজ করি। তবে আমি এসব কাজ সবাইকে বিনামূল্যে করে দেই।’ দীপক নিজ এলাকার ৫ শতাধিক বাড়ির বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইন মেরামত করেছেন।

দীপক সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তিনি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের পথে। দীপকের শরীর বিদ্যুৎরোধী হওয়ার কারণ জানতে এরইমধ্যে পুরো শরীর পরীক্ষা করেছেন তিনি। চিকিৎসকরা তার শরীরে কোনো ধরনের ত্রুটি খুঁজে পাননি।



দীপকের মা জানান, আমার আরও দুইটি ছেলে আছে তবে তাদের মধ্যে এমন গুণ নেই। অথচ দীপকের শরীরের কি-না বিদ্যুৎরোধী। বিশ্বে হয়তো দীপকই একজন, যার এমন গুণাবলী আছে। আমার মনে হয় এটি তার বাবার আশির্বাদ। ২০১১ সালে দীপকের বাবা মারা যান। আর ২০১২ সালে দীপক তার এই বিস্ময়কর প্রতিভার কথা জানতে পারে।



দিল্লির বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী গৌরব সিংহের মতে, ১১ হাজার ভোল্টের শক্তি মারাত্মক হয়ে থাকে। যদি কোনো ব্যক্তি ৫ মিটার দূরেও দাঁড়িয়ে থাকেন; তবে সে উচ্চ তাপের মাধ্যমে পুড়ে যেতে পারেন। যদি কোনো ব্যক্তি ১১ হাজার ভোল্ট ভুলেও স্পর্শ করে, তবে সে শক খায় না বরং তাৎক্ষণিক মারা যায়। ১০০০ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ দিয়ে এক কিলোমিটার লাইনের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়। তাহলে ভাবুন একবার!


বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞদের মতে, দীপকের শরীর বিদ্যুৎরোধী হলেও, তার উচিত নয় কোনো ধরনের সুরক্ষা ছাড়া এতো বড় ঝুঁকি নেওয়া। কারণ যেকোনো সময় হয়তো বিপদ হতে পারে।

সূত্র: ডেইলি মেইল/মিরর/ব্রিফলি
৫/২০/২০২১ ০২:৪৯:০০ PM

কোন আম কখন আসবে বাজারে?



গ্রীষ্মপ্রধান এ দেশে আম হলো ফলের রাজা। আকার, বাহার আর ঘ্রাণে তার জুড়ি মেলা ভার। পুষ্টিতেও ভরপুর। বৃহত্তর রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর ও রংপুর আমের জন্য বিখ্যাত। ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ফজলি, হিমসাগর, মোহনভোগ, গোলাপ খাস, সূর্যপুরি, মিসরি ভোগ, আশ্বিনাসহ প্রায় কয়েক শ’ জাতের আম উৎপাদন হয় এসব অঞ্চলে।


দেশের সব প্রান্তের মানুষই মধুমাস জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়-শ্রাবণে রাজশাহী অঞ্চলের আমের জন্য অপেক্ষা করে। পরে আম নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এক ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে। এ কর্মসূচিতে আম্রপালি জাতটিকে দেশের সব প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়। ফলে শুধু উত্তরাঞ্চল নয়, এখন বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগাম এবং বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতেও এ জাতের আম প্রচুর উৎপাদন হচ্ছে। বলা যায় এখন দেশের ৪০-৪৫ ভাগ আমই আম্রপালি জাতের।


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেওয়া তথ্যমতে, কয়েক বছর ধরে আরও কিছু জাতের আমের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন চাষিরা। এর মধ্যে রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা, ঠাকুরগাঁওয়ের বান্দিগুড়ি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গৌরমতি, বারি উদ্ভাবিত বারি-৪, বাউ উদ্ভাবিত বাউ-১৪ (ব্যানানা ম্যাংগো), রাংগুয়াই (বার্মা), পলিমার (ভারত), নান ডকমাই (থাই) অন্যতম।


রাজশাহীর আম ১৫ মে থেকে বাজারে


এ মাসের মাঝামাঝি থেকেই বাজারে এসেছে রাজশাহীর আম। প্রথমে ১৫ মে এসেছে গুটি আম। এরপর এ মাসে চার দফায় বাগান থেকে গোপালভোগ ও হিমসাগরসহ বেশ কয়েক জাতের আম নামানোর দিন নির্ধারণ করেছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন।


ল্যাংড়া আসবে জুনের প্রথম সপ্তাহে। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ২০ থেকে ২৮ মে ধাপে ধাপে নামানো হবে গোপালভোগ, লক্ষণভোগ, রানিপছন্দ ও হিমসাগর। জুনে ল্যাংড়ার পর মৌসুমের শেষ দিকে আসবে আরও নানা জাতের আম।


রাজশাহী জেলার ‘আম ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী গোপালভোগ আম নামবে ২০ মে থেকে। পাঁচদিন পর ২৫ মে থেকে নামবে লক্ষণভোগ, লখনা ও রানীপছন্দ। হিমসাগর, ক্ষীরসাপাত আম ২৮ মে থেকে পাড়া শুরু হবে। ৬ জুন থেকে নামবে ল্যাংড়া।


১৫ জুন থেকে আম্রপালি ও ফজলি নামবে। আর মৌসুমের শেষে আশ্বিনা ও বারি আম-৪ নামবে ১০ জুলাই থেকে। এ ছাড়া রঙিন আম খ্যাত বারি আম-১৪ নামবে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তায়।


এ বিষয়ে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক জানিয়েছেন, নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, পরিবহন এবং ভোক্তা পর্যায়ে বিপণন বাস্তবায়নে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রত্যেক উপজেলায় আলাদা কমিটি থাকবে। এ কমিটি অসময়ে আম নামানো এবং আমে কেমিক্যাল মেশানো ঠেকাতে আমবাগান, কেমিক্যাল বিক্রির দোকান এবং আমের আড়ত পরিদর্শন করবেন।


জনসচেতনতা সৃষ্টি ছাড়াও আইন অমান্যকারীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনবেন তারা।


অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আরও জানান, নির্ধারিত সময়ের আগে কোনোভাবেই অপরিপক্ক আম সংগ্রহ কিংবা বাজারে তোলা যাবে না। আম পাকানো, সংরক্ষণ বা বাজারজাতে কোনও কেমিক্যাল মেশানো যাবে না। আমে ভেজাল ঠেকাতে পরিবহনের আগে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় আমের বাজার জেলার পুঠিয়ার বানেশ্বরে বিশেষ নজরদারী রাখবে প্রশাসন।


গাছে পাকলেই পাড়া হবে চাপাইনবাবগঞ্জের আম


আমের রাজধানী বলা হয় চাপাইনবাবগঞ্জকে। স্থানীয় আমচাষিরা জানিয়েছেন, চাপাইনবাবগঞ্জের আম জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাজারে আসতে শুরু করবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে এবার প্রথমে নামবে গুটি আম। সেটি আরও ১৫ দিন পর বাজারে আসবে। আমচাষিদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আম গাছে পাকলে তারপর নামিয়ে বাজারে পাঠানো হবে। অপরিপক্ক আম বাজারে পাঠালে ভোক্তা অধিকার আইনে মামলা এবং জরিমানা হবে। 


নাটোরে আম পাড়া শুরু হয়েছে ১০ মে


নাটোর জেলায় ১০ মে গাছ থেকে নিরাপদ আম ও লিচু সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রাসায়নিক পদার্থের অপব্যবহার রোধ করে পরিপক্ক ফল প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পুরো মৌসুমে গাছ থেকে বিভিন্ন জাতের আম ও লিচু সংগ্রহের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।


নাটোর জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী  ১০ মে থেকে গুটি আম এবং মোজাফ্ফর জাতের লিচু সংগ্রহ করা যাবে। গোপালভোগ ২০ মে, ল্যাংড়া ৫ জুন, ক্ষিরসাপাত ২৮ মে, লক্ষণভোগ ২৫ মে, ফজলি ২০ জুন, আম্রপালি ২০ জুন, মল্লিকা ৩০ জুন, আশ্বিনা ১৫ জুলাই, রানীপছন্দ ২৫ মে, মোহনভোগ ১৫ জুন, বারিআম-৪ ১০ জুলাই, হাড়িভাঙ্গা ২০ জুন এবং গৌরমতি আম ১৫ আগস্ট থেকে পাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।


নওগাঁর আম ২০ মে’র পর


নওগাঁ জেলা প্রশাসনের ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী ১০ মে থেকে গুটি আম এবং মোজাফ্ফর জাতের লিচু সংগ্রহ করা যাবে। এ ছাড়া গোপালভোগ ২০ মে, ল্যাংড়া ৫ জুন, ক্ষিরসাপাত ২৮ মে, লক্ষণভোগ ২৫ মে, ফজলি ২০ জুন, আম্রপালি ২০ জুন, মল্লিকা ৩০ জুন, আশ্বিনা ১৫ জুলাই, রানীপছন্দ ২৫ মে, মোহনভোগ ১৫ জুন, বারিআম-৪ ১০ জুলাই, হাড়িভাঙ্গা ২০ জুন এবং গৌরমতি আম ১৫ আগস্ট থেকে পাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।


আসতে শুরু করেছে সাতক্ষীরার আম


বাজারে উঠতে শুরু করেছে সাতক্ষীরার আম। তবে প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়ের কারণে প্রথমে গোপালভোগ ও গোবিন্দভোগ জাতের আম পাড়ার অনুমতি পেয়েছেন চাষিরা। দেশের অন্য জেলার তুলনায় সাতক্ষীরার আম আগে ভাগেই পাকে। প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ থেকে বেঁধে দেওয়া সময়ে আম বাজারজাত করা হচ্ছে বলে জানান আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা। পর্যায়ক্রমে পাড়া হবে হিমসাগর, আম্রপালি ও ল্যাংড়া।


জেলা কৃষি অফিস গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, এ সময়সূচির আগে কোনও জাতের আম পরিপক্ক হলে উপজেলা কৃষিবিভাগ ও প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে কৃষকরা গাছ থেকে আম সংগ্রহ করতে পারবেন।


সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নূরুল ইসলাম বলেন, বাইরে থেকে যারা আম কিনতে আসবেন তাদেরকে কমপক্ষে তিনদিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এ ছাড়া আমচাষিদের সুবিধার্থে ২১ মে হিমসাগর, ৪ জুন আম্রপালি পাড়ার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এ বছর এখনো সাতক্ষীরায় ঝড়-বর্ষা হয়নি। তাপদাহে আম কিছুদিন আগেই পেকেছে। তাই পাড়ার তারিখও এগিয়ে আনা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

২/০৪/২০২১ ০৩:০৪:০০ PM

Afran Nisho Bio Height Wife Girlfriend Education Wiki & Net Worth

 

Afran Nisho is a popular Bangladesh model and actor who already has appeared in more than 300 telefilms and TV series. He is widely notable for his acting performance in the TV drama Jog Biyog for this drama he is awarded Meril Prothom Alo Awards. In fact, Nisho draws the huge attention of the young generation across the country after being cast in the drama ‘Appointment Letter’.


Afran Nisho Early Life & Education:

Afran Nisho was born on December 8, 1988, in Sharon, Bhuapur, Tangail, Bangladesh. He was so much passionate about the media arena from early childhood and attentive in the study. Nisho studied at Dhanmondi Government Boys School. Then he completed his higher secondary school certificate (HSC) from Dhaka College. He also enrolled at the East West University. 



Afran Nisho Career:

Afran Nisho kicked off the journey in the showbiz industry with modeling in 2003 appearing a television commercial for ‘Zini Jinjer’. In 2008, he made his acting debut with the drama ‘Sukher Asukh’. In fact, he showed off a terrible acting performance in the drama ‘Jog Biyog’. Nisho also notable for his acting performance in the dramas ‘Chirkut’, ‘No Answer’, ‘Ural Prem’, and ‘Red Ros’. Furthermore, Nisho raised his fame extensively when appeared in the drama ‘Appointment Letter’ with Mehjabin Chowdhury.



Personal Life:

Afran Nisho married Trisha under family arrangement after more than 14 years of courtship in May 2011. Together the couple has a son named Nyrvaan born in 2014 almost three and a half years later.

Quick Information 

Full Name     Afran Nisho

Nick Name     Afran

Birth Date     December 8, 1980

Birth Place     Sharon, Bhuapur, Tangail, Bangladesh

Nationality     Bangladeshi

Profession     Actor, Model

Years Active     2000–present

Religion             Islam

Zodiac Sign     Sagittarius

Body Measurement 

Height         5 feet 10 inches

                        177 centimeters

                        1.77 meters

Weight         67 kg

                        147 lbs

Chest         42 inches

Waist         33 inches

Biceps / Arms 16 inches

Shoe Size 10 US

Eye Color Brown

Hair Color Black


Personal Relation 

Marital Status     Married

Wife             Trisha

Marriage Date     May 2011

Children             Nyrvaan

সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০২০

১১/০৯/২০২০ ০৮:৫১:০০ PM

শিখ: এক ব্যতিক্রম ধর্মের আদ্যোপান্ত

 

পাঞ্জাবের মতো বিচিত্র অঞ্চল খুব একটা নেই। সেই সিন্ধু সভ্যতার ধ্যান-ধারণা দিয়ে ইতিহাসের শুরু। তারপর বৈদিক চিন্তা, আলেকজান্ডার পরবর্তী গ্রীক বিশ্বাস, বৌদ্ধ মতবাদের জয়রথ, আরব-মোগল-আফগানদের সাথে ইসলাম এবং ইউরোপীয় মিশনারির সাথে খ্রিষ্টধর্ম- সচেতন কিংবা অবচেতনেই থিতু হয়েছে এখানে। পাশাপাশি হাত ধরে বেড়ে উঠেছে সুফিবাদ এবং ভক্তিবাদ। ষোড়শ শতকের দিকে ইউরোপে যখন মার্টিন লুথার ক্যাথোলিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনে মগ্ন। সে সময় পৃথিবীর অন্য প্রান্ত পাঞ্জাবের মাটিতে গুরু নানক প্রচার করছেন আরো বিশ্বজনীন জীবনদর্শন। উত্থান ঘটছে নয়া অনুসারীর- যারা শিখ নামে পরিচিত হয় অদূর ভবিষ্যতে।


পৃথিবীর কনিষ্ঠ ধর্মগুলোর মধ্যে একটা শিখ। চিত্র অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির; image Source: velivada.com

শিখ নামে প্রচলিত হলেও সঠিক উচ্চারণ ‘সিখ’। ইংরেজিতে seek শব্দের কাছাকাছি; কেবল k এর স্থানে kh উচ্চারণের ন্যায়। পাঞ্জাবি ‘সিখনা’ শব্দের অর্থ শিক্ষা এবং সিখ অর্থ শিক্ষার্থী বা শিষ্য। যিনি শিক্ষা দেন তাকে বলা হয় গুরু। অবশ্য অনুসারীরা বাংলায় শিখ হিসাবেই পরিচিত। যে ব্যক্তি এক অদ্বিতীয় সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে, নানক থেকে গোবিন্দ সিং অব্দি দশ গুরুতে বিশ্বাস করে, গ্রন্থসাহিব, শিক্ষাকীর্তন এবং অন্য ধর্মমতের প্রতি সহনশীলতায় বিশ্বাস করে; তিনিই শিখ হিসাবে পরিগণিত। 

প্রেক্ষাপট

শিখ ধর্মদর্শনের স্পষ্টতার জন্য হাঁটতে হবে পেছনে। নবম শতকের দিকে দক্ষিণ ভারতে হিন্দু ধর্মের বিপ্লব শুরু হয়। প্রথম সারিতে ছিল আলভার এবং আদ্যার নামে দুটি দল। বৌদ্ধ এবং জৈনধর্মের দার্শনিক তত্ত্ব আলোচনায় আবেগময়তার অনুপস্থিতিকে কটাক্ষ করেন তারা। আলভাররা ছিল বিষ্ণুর ভক্ত আর আদ্যাররা শিবের। তবে দিনশেষে উভয়েই এক স্রষ্টারই উপাসনা করতো। তারা বর্ণপ্রথার কঠোরতা শিথিল করে ছড়িয়ে দেয় ভালোবাসার বাণী। একেশ্বরবাদ, মানবতার সাম্য এবং দলগতভাবে স্তুতিগান তাদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে দ্রুত। ফলে সাধারণ মানুষ ধর্মের নীরস তাত্ত্বিকতা ছেড়ে ঝুঁকে পড়তে থাকে তাদের দিকে।

সেই প্রাচীনকাল থেকেই আরবের সাথে বাণিজ্যিক যোগাযোগ ভারতের। বণিকদের অনেকেই আর আরবে ফিরে যায়নি। ইসলাম আগমনের পরে সেই বৈশিষ্ট্য আরো পোক্ত হয়। ৬৩৬ সালের পর থেকে আরব মুসলমানরা মালাবার উপকূলে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এখানেই বিয়ে করে স্থায়ী হতে থাকে। এভাবে স্থানীয়দের মধ্যে ধর্মের বিস্তার হওয়াতে দ্রুত নতুন ইন্দো-আরবীয় সমাজের তৈরি হলো। মুসলিমদের এ এক অন্য রূপ। ঘোড়ায় চড়ে সামরিক পোশাকে না; বণিক ও সুফির পোশাকে সমাজের নিচুতলায় চললো প্রচারণা।

দার্শনিক তত্ত্ব ছেড়ে তারা হাজির করেছিল ঈশ্বরপ্রেম আর মানুষের জয়গান; Image Source: apnaorg.com

এই সময়েই প্রসারিত হয় হিন্দুধর্মে ভক্তিবাদ আর ইসলামে সুফিবাদ। ভক্তিবাদ ছড়িয়ে পড়ে সারা ভারতে। উত্তর ভারতের রামানন্দ থেকে বাংলার চৈতন্য অব্দি। কবির যেন এগিয়ে যান কয়েক ধাপ সামনে। ঈশ্বরকে পাবার পথ হিসাবে তিনি ভালোবাসা আর ইচ্ছা সমর্পনের যে ব্যাখ্যা দেন; তাতে মিলিত হয়েছে ইসলাম আর হিন্দুধর্মের বিশ্বাস। অন্যদিকে মুসলিম সুফিরা ‘তোমরা যেদিকেই ঘুরবে, সেদিকেই পাবে আল্লাহকে’ বাণীতে নিজেদের নিবিষ্ট করে দিলেন। সুফিদের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল তাদের জীবনপদ্ধতি এবং শ্রেণিহীনতার প্রচার। পাঞ্জাবের আলি মখদুম হুজুরি দানশীলতার কারণে গঞ্জ বকশ বা খোদার কোষাগার বলে খ্যাত হন। শেখ ফরিদ খ্যাত হন গঞ্জশোকর নামে। খোদাপ্রাপ্তির পথে ভক্ত আর সুফি উভয়েই হাঁটছে যেন একই পথে।

জন্ম

১৩৯৮ সালে তৈমুর লঙ-এর আক্রমণ ভারতের সংগঠিত সরকার ব্যবস্থায় একরকম সমাপ্তি আনে। রাজ্যপালরা দিল্লীর বিরোধিতা করে নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করতে থাকে। বিক্ষিপ্ত ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক শাসনের প্রভাব পড়লো জনতার উপর। রাজকোষের স্বার্থে ভারী হয়ে আসতে থাকলো করের বোঝা। যতোই চাপ বাড়তে থাকলো, ধর্মান্তরিত মানুষেরা ফিরতে থাকে স্বধর্মে। লোদি বংশের যে বিশৃঙ্খলা বাবরকে ভারতে আসতে প্রলুব্ধ করেছিল; একই সময়ে জন্মানো ঘৃণা আর জবরদস্তির আবহে চাপা পড়ে যাচ্ছিল সুফি ও ভক্তদের ভালোবাসার গান।

১৪৬৯ সালের ১৫ এপ্রিল রাই ভো দি তালওয়ান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নানক। পিতা মেহতা কালিয়া এবং মা তৃপ্ত। সাত বছর বয়সে বর্ণমালা ও সংখ্যা শেখানোর জন্য পণ্ডিতের কাছে পাঠানো হয়। পরে আরবি ও ফারসি শেখার জন্য এক মুসলিম আলেমের সান্নিধ্যে থাকেন দুই বছর। কিন্তু পার্থিবতায় তার আগ্রহ ছিল না কখনোই। তাই পূন্যবান ব্যক্তিদের সাথে কিংবা নির্জনে ধ্যানমগ্ন সময় কাটাতে লাগলেন। দীর্ঘ অভিজ্ঞতার শেষে একদিন নদীতে পূন্যস্নান করতে গেলে শুনতে পান দৈববাণী। আমূল বদলে দেয় তাকে ঘটনাটা। ছুটাছুটি করেন শ্রীলঙ্কা থেকে লাদাখ এবং মথুরা থেকে মক্কা। ১৫৩৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ভোরে ইহধাম ত্যাগ করেন।

গুরু নানক মক্কা, মদিনা এবং বাগদাদ ভ্রমণের সময় তাজউদ্দিন ও অন্যান্য শিষ্যের সাথে;  Image Source: sikhnet.com

নানকের প্রচারণা ছিল সহজ। ঈশ্বর তার কাছে কেবল আধ্যাত্মিক ধারণা হয়ে থাকেনি; এসেছে সামাজিক আচরণের নীতিমালা হিসাবেও। ঈশ্বর চূড়ান্ত সত্য হবার কারণে যা কিছুই অসত্য, তা অনৈশ্বরিক। জগতে হিন্দু বা মুসলিম বলে কিছু নেই। নেই সাদা কিংবা কালো, রাজা কিংবা ফকির, নারী কিংবা পুরুষের পার্থক্য। কেবল আছেন এক ঈশ্বর। এজন্য বলা হয় ‘ইক ওয়াঙ্কার’ বা সৃষ্টি কর্তা এক। তার সামনে সকল মানবজাতি সমান। নানক বিশ্বাস করতেন, জগতের সকল অনিষ্টের পেছনে মানুষের অহম সম্পৃক্ত। দল এবং উপদল জনিত প্রতিযোগিতাকে দেখেছেন অনর্থক হিসেবে। তার মতে,

যোগীর পরনের ছেড়া তালি দেয়া কাপড়ে ধর্ম নেই,
সে যা বহন করে, তাতেও নেই
শরীরের ভস্মেও নেই;
কানের আংটিতেও থাকে না ধর্ম,
কামানো মাথাতেও না,
শাঁখের খোসায় ফুঁ দেয়াতেও না।
যদি সত্যিই ধর্মের পথ দেখতে চাও;
পৃথিবীর সকল অবিশুদ্ধতা থেকে মুক্ত থাকো।


পরিণতি

নানক বরাবরই গুরুর আবশ্যকতা নিয়ে কথা বলতেন। পরবর্তীতে ধর্ম এগিয়ে গিয়েছে সেই গুরুদের হাত ধরে। লেহনা (১৫০৪-৫২) ছিলেন অনুরক্ত হিন্দু। নানকের সংস্পর্কে এসে হয়ে উঠলেন গুরু অঙ্গদ। তার নম্রতার দরুণ বিভাজন রোধ হয়ে শিষ্যের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। তিনিই বর্ণমালা বাছাই করে নানকের স্তুতিগুলো গ্রন্থিত করা শুরু করেন; যা গুরুমুখী নামে পরিচিত। দুই ছেলে থাকার পরও পরবর্তী গুরু হিসেবে মনোনীত করে যান তেয়াত্তর বছর বয়সী শিষ্য অমর দাসকে (১৪৭৯-১৫৭৮)। শিখদের জন্য বার্ষিক উৎসব, এক বিয়ের প্রচলন, বিধবাদের পুনর্বিবাহের প্রচেষ্টার মতো যুগান্তকারী কিছু পদক্ষেপ নেন অমর দাস।  

পঞ্চম গুরু অর্জুনের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। ধর্মীয় সম্প্রীতির চিহ্ন হিসেবে লাহোরের সুফি মিয়া মীরকে দিয়ে তিনি হরমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। পূর্ববর্তী লেখা সংকলিত করে স্থাপন করেন অমৃতসরে। মোগল সম্রাট আকবর পছন্দ করলেও জাহাঙ্গীরের কোপদৃষ্টি পড়ে তার উপর। কিন্তু প্রথমদিকে তেমন কিছু করেননি। পরবর্তীতে বিদ্রোহী শাহজাদা খসরুকে সমর্থন দেবার অভিযোগে দেয়া হয় মৃত্যুদণ্ড। অর্জুনের রক্ত শিখ সম্প্রদায়ের পাশাপাশি পাঞ্জাব জাতীয়তাবাদের বীজে পরিণত হয়। আধ্যাত্মিকতার সাথে যুক্ত হয় অধিকার আদায়ের প্রচেষ্টা। স্থানীয় মুঘল প্রশাসকের স্বেচ্ছাচার থেকে নিপীড়িত হিন্দু ও মুসলমানদের রক্ষা করার তদবির চলে। পরিণামে ১৬৭৫ সালে নবম গুরু ত্যাগ বাহাদুরকে মৃত্যুদণ্ড দেন আরেক সম্রাট আওরঙ্গজেব। বলা প্রাসঙ্গিক, ধর্মের ইতিহাসে ত্যাগ বাহাদুরই একমাত্র প্রচারক, যে ভিন্নধর্মের অধিকার আদায়ে শহিদ। 

ত্যাগ বাহাদুরের ত্যাগ শিখধর্মকে নতুন করে জেগে উঠার শক্তি দিয়েছে; Image Source: Dailysikhupdates.com

পিতার মৃত্যুর পর তার ইচ্ছা অনুসারেই মাত্র নয় বছর বয়সে গুরুর আসনে বসেন গোবিন্দ সিং (১৬৬৬-১৭০৮)। বয়সে কম হলেও তার নেয়া পদক্ষেপগুলোই শিখ বিশ্বাসকে মহিরুহে পরিণত করে। তিনি একাধারে শিখেন সংস্কৃত, হিন্দি, পাঞ্জাবি এবং ফারসি; অন্যদিকে রপ্ত করেন ঘোড়ায় চড়া এবং বন্দুক চালনা। পড়াশোনা করেন নানকের বোধিপ্রাপ্তি থেকে তার পিতার মৃত্যুদণ্ড অব্দি শিখদের সংগ্রাম নিয়ে। দাদা হরগোবিন্দের মতো হাতে তুলে নেন তলোয়ার। পরিবর্তন আসলো শিখ সম্প্রদায়ের সাধারণ বৈশিষ্ট্যেও। শাসকের নিপীড়ন থেকে অসহায় এবং সাধারণকে রক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠা করলেন বিশেষ বাহিনী খালসা। চলতে থাকে সশস্ত্র সংগ্রাম। ততদিনে সকল গুরুর আপ্তবাক্য নিয়ে সুসংগঠিত করা হয়েছে গ্রন্থ সাহিব। গুরু গোবিন্দ মানুষ গুরু পর্বের সমাপ্তি টেনে পরবর্তী গুরু হিসাবে গ্রন্থ সাহিবকে নিযুক্ত করলেন। 

গ্রন্থসাহিব

বিশ্বের ধর্মগ্রন্থগুলোর মধ্যে গ্রন্থসাহিব অনেক দিক দিয়েই আলাদা। কোনো ধর্মীয় প্রধান পুরুষের মতোই এই গ্রন্থ শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে শিখদের অমর গুরুর ভূমিকা পালন করছে। তাছাড়া গ্রন্থসাহিবই একমাত্র ধর্মগ্রন্থ; যার ভেতরে অন্য ধর্মের মানুষের লেখাও স্থান পেয়েছে। শিখরা মূর্তিপুজা করে না; কিন্তু গ্রন্থটিকে জীবিত গুরুর ন্যায় শ্রদ্ধা করে। মানুষের আত্মিক আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে লেখাগুলি মূলত কবিতার আদলে। লেখাগুলো কেবল পাঠ করা হয় না; কীর্তন হিসাবে সমাবেত কন্ঠে গাওয়া হয়। গ্রন্থসাহিবের থাকার স্থান হিসাবেই শিখ উপসনালয়ের নাম গুরুদুয়ারা বা গুরুর দরজা।

পঞ্চম গুরু অর্জুন বিকৃতির হাত থেকে সত্যবাণী সুরক্ষার জন্য হাত দিয়েছিলেন লেখা সংকলনের। সেই লক্ষ্যে ভাই পিয়ারা, ভাই গুরুদাস এবং বাবা বুদ্ধেকে প্রেরণ করেছিলেন বিভিন্ন প্রান্তে পাণ্ডুলিপি অন্বেষণে। নিজেও ছোটাছুটি করেন পুরাতন গুরুদের পরিবারে। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পরে ১৬০৬ সালে অমৃতসরের হরমন্দিরে স্থাপন করা হয় গ্রন্থসাহিবকে। গুরু অর্জুন নিজেই তার সামনে অবনত শিরে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতেন। প্রথম থেকেই লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণভেদে সকলেই এটি পড়তে পারতো। পরবর্তীতে নানা টানাপোড়েন পার হয়ে গুরু গোবিন্দ ১৭০৫ সালে এর সংকলন সমাপ্তি করেন। তখন তার নিজের বয়সও শেষের দিকে। তাই অন্য এক সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। নতুন কাউকে গুরু নিযুক্ত না করে গ্রন্থসাহিবকেই পরবর্তী চিরন্তন গুরু বলে নিযুক্ত করলেন ১৭০৮ সালে।

গ্রন্থসাহিব কেবল ধর্মগ্রন্থ না, চিরন্তন গুরু; Image Source: khalsaforce.in

গ্রন্থসাহিবের বিবরণ ধারাবাহিক। গুরুদের স্তোত্রের পরে আছে ভগত বা সাধুদের লেখা। যেখানে গুরু নানকের ৯৭৪টি স্তোত্র, অঙ্গদের ৬২ শ্লোক, অমর দাসের ৯০৭ স্তোত্র, রাম দাসের ৬৭৯ স্তোত্র, অর্জুনের ২২১৮ স্তোত্র, ত্যাগ বাহাদুরের ৫৯ স্তোত্র এবং গুরু গোবিন্দের ১টি শ্লোক। ভগত বা সাধুরা ছিল নানা বিশ্বাসের। তাদের মধ্যে শেখ ফরিদ এবং শেখ ভিখান ছিলেন মুসলমান, কবির ছিলেন ব্রাহ্মণ বংশে জন্ম নিয়ে মুসলিম ঘরে বেড়ে উঠা, জয়দেব বিখ্যাত সংস্কৃত কবি, রামানন্দ, পরমানন্দ, রবিদাসসহ অনেকেই হিন্দু সাধু। সম্মিলনের এই বৈচিত্র্য গ্রন্থকে অন্য অনেক গ্রন্থ থেকে আলাদা করেছে।

সংস্কৃতি

১৬৯৯ সালের প্রথম প্রহরে উৎসবে যোগদানের জন্য অনুসারীদের জন্য বিশেষ বার্তা পাঠান গুরু গোবিন্দ সিং। নিষেধ করেন চুল ও দাড়ি কাটার জন্য। নির্ধারিত দিনে প্রচুর মানুষের সমাগম হলো। গুরু খাপ থেকে তরবারি বের করে পাঁচজন ব্যক্তির জীবন চাইলেন। কিছুক্ষণ দ্বিধাগ্রস্থ থাকার পর রাজি হলো এক ব্যক্তি। তাকে নিয়ে তাঁবুতে প্রবেশ করলেন গুরু। বের হলেন রক্ত মাখা তরবারি হাতে। এভাবে পঞ্চম শিকার নিয়ে তাঁবুর ভেতরে ঢুকে বের হবার সময় পাঁচজনকেই সাথে নিয়ে বেরিয়ে আসেন। জনসম্মুখে ঘোষণা দিয়ে তাদেরকে খ্যাত করেন পাঞ্জপিয়ারে বা পছন্দের পাঁচ ব্যক্তি নামে। পরবর্তীতে তারাই পরিণত হন শিখ সম্প্রদায়ের মনোযোগের কেন্দ্র; খালসা বা বিশুদ্ধ নামে।

খালসার দীক্ষা পুনর্জন্মকেই চিহ্নিত করে। গুরু গোবিন্দ পরিষ্কার পানিতে কিছুটা চিনি দিলেন। মেশালেন দুই প্রান্ত বিশিষ্ট খঞ্জরের সাহায্যে। দীক্ষিত করলেন মন্ত্রের মাধ্যমে। পুরুষদের নাম পরিবর্তন করে তার শেষ সিং পদবি লাগিয়ে দেয়া হলো। পরবর্তীতে নারীদের দেয়া হতো কৌর উপাধি। দীক্ষার মধ্য দিয়ে পূর্ববর্তী পেশা (ক্রীতনাশ), সম্পর্ক (কুলনাশ), প্রাথমিক ধর্ম (ধর্মনাশ) এবং শিখ পরিপন্থী আচার (কর্মনাশ) ছেড়ে দিতে হয়।

খালসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গুরু গোবিন্দ সিং শিখদের নতুন পরিচয় ও রূপ প্রদান করেন; Image Source: sikhcouncil.co.uk

খালসাদের জন্য পাঁচটা প্রতীক চিহ্নিত হয়। কেশ, কঙ্ঘ, কাচ, কড়া এবং কিরপান। কেশ বা চুল-দাড়ি কাটা যাবে না। পরিপাটি রাখার জন্য চুলে একটা কঙ্ঘ বা চিরুনি বহন করতে হবে। সেই সময়ের যোদ্ধাদের মতো হাঁটু অব্দি লম্বা প্যান্ট বা কাচ পরতে হবে। ডান কব্জিতে একটা লোহার ব্রেসলেট বা কড়া ধারণ করতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য সর্বদা একটা তলোয়ার বা কিরপান বহন করতে হবে। এই পাঁচটা প্রতীকের বাইরেও আরো চারটি নিয়ম বা রাহাত আছে। কখনোই চুল কাটা যাবে না (আগের আইনের পরিসর বৃদ্ধি), মদ্যপান করা যাবে না, শুধু ঝটকা মাংস বা যেখানে এক কোপে প্রাণী বধ করা হয়, তা খেতে হবে এবং কোন মুসলমান ব্যক্তিকে নিপীড়ন করা যাবে না। বর্তমানে বহুল পরিচিত শিখ পাগড়ির জন্ম আসলে ধর্মীয় মৌলিক আদেশ থেকে না; চুলের সুরক্ষার জন্য পরবর্তীতে উদ্ভাবিত। যাহোক, গুরু গোবিন্দ পাঁচ জনকে দীক্ষিত করে বলে দিলেন ভ্রাতৃসম্প্রদায়ের দীক্ষা দিতে। এভাবে ছড়িয়ে পড়লো শপথ।

ওয়াহে গুরু জি কা খালসা
ওয়াহে গুরু জি কা ফাতেহ;
অর্থাৎ খালসারা ঈশ্বরের পছন্দের; আমাদের ঈশ্বরের জয় হোক।


তারপর

ভারতে শিখ ধর্মের অনুসারী প্রায় বিশ মিলিয়ন, যা মোট জনসংখ্যার ২% এর মতো। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী শিখ নাগরিকের ৮০ শতাংশ কেবল পাঞ্জাবেই থাকে। সেই সময়ে পাঞ্জাবের নাগরিকদের ৬৩ শতাংশ ছিল শিখ। ২০০১ সালের হিসাবে অনুসারে যুক্তরাজ্যে ৩৩৬০০০ মানুষ শিখ ধর্মের অনুসারী; যা মোট জনসংখ্যার ০.০৬%। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের অবস্থান বেশ পোক্ত। তবে পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রায়ই শিখদের মুসলিম হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। ইসলামবিদ্বেষের বলির পাঠা হচ্ছে শিখরা; তার কারণ শিখ সম্পর্কে নিয়ে ধারণার কমতি। 


ঢাকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক গুরুদুয়ারা নানকশাহী; Image Source: worldgurudwaras

হিন্দুধর্ম ও ইসলামের দীর্ঘদিনের সহাবস্থানের মিলনবিন্দুতে জন্ম নিয়েছে শিখধর্ম। স্রষ্টার সামনে মানুষকে হাজির করেছে নতুন শক্তি দিয়ে। ষোড়শ শতকের দিকে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র এবং লিঙ্গের সমতা নিয়ে কথা বলা কম আশ্চর্যের না। শুরুতে আধ্যাত্মিকতা নিয়ে যাত্রা হলেও পরপর গুরুদের হত্যাকাণ্ড তাদেরকে সামরিক কৌশলী করে তোলে। মুঘল যুগের সমাপ্তির দিকে পাঞ্জাবকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠিত হয় শিখ রাজ্য। খালিস্তান আন্দোলনের কথা কে না জানে! বর্তমান ভারতীয় সেনাবাহিনীর সিংহভাগ সদস্যই শিখ। বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ঠিক পশ্চিম পাশে অবস্থিত শিখধর্মাবলম্বীদের গুরুদুয়ারা। সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার এখানে সকল ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গের অভ্যাগতরা আহার করতে পারেন। 


This Bengali article is about Sikhism, an Indian religion based on human rights and social harmony. Here is the brief introduction of their foundation, belief and evolution over centuries.  

References:

1) Sikhism: A Very Short Introduction, Eleanor Nesbitt, Oxford University Press, 2005

2) World Religions: Sikhism, Nikky-Guninder Kaur Singh, Chelsea House Publishers, New York, Third Edition, 2009

3) A History of the Sikhs, Vol-1, Khushwant Singh, Oxford University Press, 2019

Featured Image: sikhnet.com

Article Sourse: roar.meida